করোনাভাইরাস মহামারির কারণে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেশনজট কমাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ প্রণয়ন করে। কিন্তু অবহেলার কারণে প্রায় অর্ধশত বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এতে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সেশনজটের কবলে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থী। সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
সেশনজট কমাতে ২০২১ সালের ১ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনায় ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে এবং ১২ মাসের বর্ষ আট মাসে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এই পরিকল্পনার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে। তবে এরই মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত না মেনে একাডেমিক কার্যক্রম চালাচ্ছে অনেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ক্লাস রুটিন, পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের তারিখ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এক দিনও সেশনজট কমাতে পারেনি। এগুলো হলো : সংগীত বিভাগ, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কমিউনিকেশন ডিস-অর্ডারস বিভাগ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। ‘লস রিকভারি প্ল্যান’
একটুও বাস্তবায়ন না করায় এই বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোর প্রায় ছয় হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী বর্তমানে এক বছর মেয়াদের সেশনজটে রয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের অবহেলা, রুটিন দিয়েও তা অনুসরণ না করা, পরীক্ষার পর দুই মাসের সেমিস্টার বিরতি রাখা ইত্যাদি কারণে ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ একটুও বাস্তবায়িত হয়নি। এরই মধ্যে এই বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলো আগের নিয়মে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ, গণিত বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, ফলিত গণিত বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগ, আইন বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ, ভূতত্ত্ব বিভাগ, অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ, ভাস্কর্য বিভাগ, প্রাচ্যকলা বিভাগ, শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটে ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি, যার কারণে এ বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রায় ১৩ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থী ছয় থেকে ১০ মাসের বিভিন্ন মেয়াদের সেশনজটে রয়েছেন।
এদিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করায় অনেক শিক্ষার্থী হতাশা প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তাঁদের অনেক সময় বাঁচত। একদিকে করোনার কারণে তাঁরা পিছিয়েছেন, আবার যেসব বিভাগে কার্যকর হয়েছে, সেগুলোতে তাঁদের ব্যাচমেটদের চেয়ে তাঁরা পিছিয়ে গেছেন। এ সময় তাঁরা ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের হতাশার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমরা সব সময়ই সেশনজট কমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীদের এ রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। শিক্ষার্থীদের উচিত এ পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে মানসিক শক্তি সঞ্চয় করা। এ জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্য নিতে পারে।’
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘লস রিকভারি প্ল্যানের আওতায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতেই এই পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। যে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না, সেগুলোতে চিঠি দেওয়া হবে।’
সোর্স : কালের কন্ঠ