দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাবতীয় খরচ বহন করে সরকার। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও উন্নয়ন বাবদ খরচ বাদে বাকি সব খরচ শিক্ষার্থী ব্যয় হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকার শিক্ষার্থীপ্রতি যে খরচ বহন করে তাতে বিস্তর ফারাক রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার বছরে প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ করলেও কোথায়ও করছে হাজারেরও কম। আবার বছরপ্রতি শিক্ষার্থী ব্যয় বাড়া-কমার ক্ষেত্রেও রয়েছে আকাশপাতাল ব্যবধান। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র দেখা যায়। শিক্ষা ব্যয়ে এমন ফারাক রেখে কোয়ালিটি এডুকেশন কতোটা সম্ভব তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা ব্যয়ে বৈষম্য থাকা কাম্য নয়। এটা কমিয়ে আনা উচিত।
ইউজিসি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে ২০২১ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। এতে দেখা যায়, সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ করছে।
বিজ্ঞাপন
Ad
আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেটি কেবল ৭৪৩ টাকা। ২০২০ সালে এ ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৫১ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৪ টাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ৬৪ হাজার ৭১৩ টাকা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ হাজার টাকা। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের ব্যয়ও অনেক কম। ২০২১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ টাকা। ২০১৯ সালে ছিল ১ হাজার ৭৮৬ টাকা। তারও আগের বছর ছিল ২ হাজার ৮২৭ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪৬ লাখ। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ৪ লাখ ৪৩১ টাকা। ২০২০ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১৬২ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। অথচ ২০২০ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ছিল ৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৯৭ টাকা। ২০১৯ সালে ছিল ৯ লাখ ২৫ হাজার ৯৬৯ টাকা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় ৪ লাখ ৩ হাজার টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৮ টাকা। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। যা পূর্ববর্তী বছর ছিল ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৭ টাকা। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ টাকা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ব্যয় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬০ টাকা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ২ লাখ ৩ হাজার টাকা। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ১০ হাজার ৮৪ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের ব্যয় ৩৭ হাজার ১৭৩ টাকা। আগের দুই বছরও বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যয় ছিল ৩৩ হাজার ১৭৩ টাকা করে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, স্ট্যাডিটা পুরোপুরি সঠিক বলে মনে হয়নি আমার কাছে। তবে এটা ঠিক আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে তাদের যেতে হয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তারা ভালো করছে। তাই সুযোগের সমতা তৈরি হলে আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। যদি সব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা তৈরি হয় তাহলে বৈষম্যের বিষয়টি আসবে না। সরকারও এ বিষয়ে আন্তরিক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কেও গুরুত্ব দিচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিষয়টি ঠিক নয়। সরকার সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। উচ্চশিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইনফ্রাসট্রাকচারাল ও টেকনোলজিক্যাল কারণে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পায় না। তাই আগে এ সুবিধাগুলো এনশিউর করতে হবে। তখন এ বৈষম্যের বিষয়টি আসবে না। তবে নিজেদের হিসাবে গরমিল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয়ের যে হিসাবটা দিয়েছি সেটিও পুরোপুরি ঠিক না। বাস্তবতার কারণে এটা সঠিকভাবে তুলে আনা যায় না। এটা পুরোপুরি সঠিক বলা যাবে না। এ প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয় আছে। এটাকে আনুমানিক একটা হিসাব বলা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, ইউজিসি’র হিসেবে অনুযায়ী তো এটা বৈষম্য স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। আমি মনে করি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। এখানে যে ব্যয় হয় তা প্রত্যাশিত নয়। আবার যেখানে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে সেটিও অপ্রয়োজনীয় কি না তা দেখা দরকার বলে আমি মনে করি।
সোর্স : মানবজমিন