কথিত বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে আবারও বাংলাদেশের বিপদে একতরফা মুনাফা লুণ্ঠনের লক্ষ্যে চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জাানানো হয়েছে, সংকট দূর করার উদ্দেশ্যকে প্রাধান্যে রেখে সরকার যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে ঠিক তখনই ভারত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। দেশটি বাংলাদেশের কাছে কয়লার দাম হাঁকিয়েছে ৬০ শতাংশ বেশি।
এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে দৃশ্যপটে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষভাবে আলোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানি। ভারতের হয়ে আদানি গ্রুপই তৎপরতা চালাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত রামপাল এবং বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে করা পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি টন কয়লার দাম যেখানে পড়েছে ২৫০ মার্কিন ডলারের মতো সেখানে আদানি গ্রুপ তার প্রস্তাবে রামপাল এবং পায়রা উভয়ের চাইতেই ৬০ শতাংশের বেশি দাম চেয়েছে। প্রতি টন কয়লার দাম আদানি গ্রুপ চেয়েছে ৪০০ ডলার। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির আপত্তি ও প্রতিবাদের মুখে নীরব থাকার কৌশল নিলেও আদানি গ্রুপ তাদের দাম কমায়নি।
এদিকে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞসহ বিদ্যুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই এত বেশি দামে কয়লা না কেনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কোনো কোনো গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে রফতানির বিষয়ে ভারতের প্রতারণার কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে এসেছে পাঁচ লাখ টন চাল রফতানি নিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে ভারতের প্রতারণার কথা, যার ফলে বাংলাদেশকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন হতে হয়েছিল। কথাটা স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে, দেশকে যাতে আবারও ভারতের ইচ্ছার শিকার না বানানো হয়।
আমরাও মনে করি, ৬০ শতাংশ বেশি দাম হাঁকানোর মধ্য দিয়ে ভারত নিজেই যেহেতু তার অশুভ উদ্দেশ্যের প্রকাশ ঘটিয়েছে সেহেতু বাংলাদেশের জন্যও সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সরকারের উচিত ভারতের তথা আদানি গ্রুপের কবল থেকে বেরিয়ে আসা এবং অত্যধিক দাম দিয়ে কয়লা আমদানি না করা। আমরা বরং ৬০ শতাংশ বেশি দামে কয়লা আমদানির চাইতে দেশের অভ্যন্তরে সংগ্রহ বাড়ানোর এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। দেশি বা বিদেশি ব্যবসায়ী কোনো গোষ্ঠীর পক্ষেই যাতে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে সংকট সৃষ্টি করা সম্ভব না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। এজন্য দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বার্থেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসায়ী নামধারী কোনো গোষ্ঠীই যাতে দেশের মানুষকে জিম্মি করতে না পারে এবং জনগণ যাতে লাভবান হওয়ার সুযোগ পায় সে ব্যাপারে অবশ্যই নজরদারি এবং তৎপরতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এমন ব্যবস্থাও নেয়া দরকার, যাতে কয়লা আমদানির সমগ্র কার্যক্রমে কেবলই টাউট এবং দলীয় লোকজন লাইসেন্স না পেয়ে যায়।
আমরা আশা করতে চাই, সরকার বিদ্যুতের বিষয়ে দ্রুত তৎপর হয়ে উঠবে এবং কেবলই ভারত থেকে কয়লা আমদানির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। আমাদের মতে ভারত যেহেতু চাল থেকে পেঁয়াজ পর্যন্ত সকল পণ্যের রফতানির ক্ষেত্রে বারবার বাংলাদেশের সঙ্গে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতারণা করেছে সেহেতু বিদ্যুতের জন্য ভারতের পরিবর্তে কয়লা আমদানি করতে হবে অন্য দেশগুলো থেকে।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম