আসন্ন রমজানে মসলার বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাদের মতে, এরই মধ্যে বেশির ভাগ মসলার দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে আদা ও রসুনের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রমজানে মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে নির্বিঘ্নে এলসি খোলা, আমদানি শুল্ক শিথিল ও বাজারে তদারকি অভিযান বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন মসলা ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সোমবার গরম মসলার মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে মসলা ব্যবসায়ীদের মতবিনিময়সভা হয়।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানিকারকরা দাম বেশি রাখছেন। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, তুরস্ক ও আফগানিস্তানে সরকার এলসি বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতেও দাম চড়া। এতেই দেশে বাজার চড়া। এ ছাড়া মসলায় আমদানি শুল্ক ৫৮.৬ শতাংশ পর্যন্ত। এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা বলেন, এলসি জটিলতার সমাধান করা না হলে এর প্রভাব পড়বে রমজানের বাজারে।
এ বিষয়ে ভোক্তার মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিউজ্জামান বলেন, ‘এলসির বিষয়টি বর্তমানে স্বাভাবিক হচ্ছে। মসলা আমদানির বিষয়ে এলসি খোলা নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। সমস্যার যেন দ্রুত সমাধান হয় সে বিষয়ে আমরা বন্দর ও অন্যদের সঙ্গে কাজ করব। রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক কাঠামোর বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মসলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
সরকারের বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে দেখা যায়, এক মাসে রসুনের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। এক বছরে বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। আদা এক মাসে দাম বেড়েছে ৪৮.৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ। জিরা এক মাসে ২১.৬৩ শতাংশ, এক বছরে ৮৭.৫ শতাংশ বেড়েছে।
সভায় রমজান মাসকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে পণ্যের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। পণ্য মজুদ রেখে বাজার অস্থিতিশীল করা হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে বলেও তিনি জানান।
সফিকুজ্জামান বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নিবিড়ভাবে বাজারে অভিযান পরিচালনা জোরদার করা হবে। বাজার কমিটিকে পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হবে না, অধিদপ্তর সেসব বাজার কমিটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
ব্যবসায়ীদের বাজার অভিযান সীমিত করা প্রসঙ্গে ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, অভিযান শিথিল করতে হলে ব্যবসায়ীদের সে দায়িত্ব নিতে হবে। অসাধু পথে দাম বাড়ানো, অনিরাপদ সামগ্রী, মসলায় রং ব্যবহার করা— এসব যে হবে না সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় সভায় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবু বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক মসলার জন্য আমাদের এলসি দিচ্ছে না। মসলার বাজার হচ্ছে আমদানিনির্ভর। শুধু বাংলাদেশ নয়, নানা কারণে সারা বিশ্বেই এ সমস্যা চলছে। জিরাসহ বেশির ভাগ মসলা আমাদের দেশে আসে আফগানিস্তান, তুরস্ক ও ভারত থেকে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তান ও তুরস্কে কোনো এলসি দিচ্ছে না? আমরা এখন শুধু ভারত থেকে জিরা আমদানি করেছি। কিন্তু এখন ভারতেও জিরার দাম বেড়েছে? ভারতও কখন মসলা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় কি না তা বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ডলারের দামও বেড়েছে। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য। তবে আশা করি রমজানে আমরা মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারব।’
সোর্স : কালের কন্ঠ