পরিবহনে ৫১ ধরনের সেবা মূল্যতে বেড়েছে ফি। কোনো কোনো খাতে আগে যে ফি ছিল তা হয়েছে দ্বিগুণ। ড্রাইভিং ও গাড়ির স্মার্ট কার্ড ডেলিভারিতে জটলা, ফরম পেতে দীর্ঘ লাইন, সঠিক সময়ে কার্ড পেতে বিআরটিএ থেকে বার্তা না আসাসহ নানারকম ভোগান্তি তো রয়েছেই। এর মধ্যে সেবামূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন মালিক ও গ্রাহকরা। মিরপুরে বিআরটিএ অফিসে অনেক গাড়ির মালিক পরিবহনের সেবামূল্য দিতে এসে বাড়তি টাকার জন্য ফিরে গেছেন। বাসা থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এসে পরিশোধ করেছেন পরিবহন সেবামূল্যের ফি। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স, লার্নার লাইসেন্স, পুরনো লাইসেন্স নবায়ন, মোটরযান মেরামত কারখানা চার্জ, ড্রাইভিং স্কুলের নিবন্ধন নবায়ন ও স্কুল পরিদর্শন ফিসহ ৫১ সেবায় বেড়েছে পরিবহন সেবামূল্য। মোটরযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলছেন, যে সব যানবাহন ও চালকদের লাইসেন্স নেই তারা শুধুমাত্র টাকার জন্য ও বিআরটিতে ভোগান্তি এড়াতে লাইসেন্স ইস্যু করেন না। আর এতে করে ঢাকায় প্রায় ৭৫ হাজার গাড়ি বিনা লাইসেন্সে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নতুন করে ফি বাড়ার পরে লাইসেন্সহীন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি কমবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা।
বিজ্ঞাপন
বাড়তে পারে গণপরিবহনের ভাড়া। তবে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, যে পরিবহনের সেবার মূল্য বাড়ানো হয়েছে তা তারা নির্ধারণ করেন না। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে থাকেন। এটি নিয়ে যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তি না হয় এজন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহাবুবে রব্বানী মানবজমিনকে জানান, ‘সবকিছুর সেবামূল্য বেড়েছে। তাই কর্তৃপক্ষ পরিবহনের সেবামূল্য বাড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই সেবামূল্য নির্ধারণ করেন না। এটি নির্ধারণ করে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ আসার পর কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই সেবামূল্য বাড়িয়েছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধি ও সেতুতে টোলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে পরিবহন রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। পরিবহন সেবামূল্য বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহনের সড়কে চলাচলের খরচও বেড়েছে।
বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আগে শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য দেয়া লাগতো ৩ হাজার টাকা, তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫০০ টাকা। ১ হাজার ৪শ’ সিসির ইঞ্জিন ক্ষমতার একটি প্রাইভেট কারের নিবন্ধন ফি ছিল ৪৯ হাজার টাকা। ফি বাড়ার পর তা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। যাত্রীবাহী ৫২ আসনের একটি বাসের নিবন্ধন আগে ছিল ১৭ হাজার ২৫০ টাকা। ফি বাড়ার পর হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ১০০ সিসি পর্যন্ত পরিবহনের নিবন্ধন খরচ বেড়েছে ১ হাজার টাকারও বেশি। ১০০ থেকে ১৪০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার পরিবহনের নিবন্ধন ফি বেড়েছে ১৫০০ টাকা। এ ছাড়াও ১৫০ সিসির ঊর্ধ্বের ইঞ্জিনের গাড়ির ক্ষেত্রেও বেড়েছে নিবন্ধন ফি।
ড্রাইভিং স্কুলগুলোকে লাইসেন্সের জন্য ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। প্রশিক্ষকের লাইসেন্স খরচ ৭৫০ থেকে বেড়ে ২ হাজার করা হয়েছে। এ ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য তহবিল গঠনের লক্ষ্যে যানবাহন মালিকদের এককালীন অর্থ দিতে হবে। বাস-ট্রাকের জন্য তা ১ হাজার ৫শ’ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে ৫শ’ টাকা, তিন চাকার মোটরযানের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা ও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা দিতে হবে।
সবুজ নামে এক গ্রাহক জানান, গত মাসে তিনি একটি প্রাইভেটকার কিনেছেন। তিনি নিবন্ধনের জন্য ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, এখানকার কর্মকর্তারা জানান, প্রাইভেটকারের ফি করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এজন্য তিনি গাড়ির ড্রাইভারকে অতিরিক্ত টাকা আনার জন্য বাসায় পাঠিয়েছেন।
লার্নার কার্ডের আবেদনকারী ইউনুস আলী জানান, তার ভাইয়ের জন্য একটি লার্নার কার্ডের জন্য এসেছেন বিআরটিএতে। অনেকদিন আগে তার স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন করলেও সেটি এখনো পাননি। আবার এর মধ্যে পরিবহন ফি বেড়েছে যা গ্রাহকদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলবে।
সোর্স : মানবজমিন