প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ভাইরাসটি করোনার চেয়ে অনেকে বেশি শক্তিশালী। আক্রান্তদের ৭০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শত ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে লালমনিরহাট জেলায় ২২ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং ২১ জনেরই মৃত্যু হয়। পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি নিপাহর সংক্রমণ হয়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ২০২২ সালেও দেশে তিনজন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন সুস্থ হয়েছেন। এই দুইজনই নওগাঁও জেলার বাসিন্দা এবং দু’জনই নারী।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ছয় জেলায় ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় জেলায় ১০ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। আক্রান্তদের ৭০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলেছে, আক্রান্ত ও মৃত্যু যাই হোক, এই ভাইরাসে পুরো দেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম শনাক্তের পর এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ৩০টির বেশি জেলায়। এবার শীত মৌসুমের শুরু থেকেই বিভিন্ন স্থানে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করে স্বাস্থ্য বিভাগ। বাদুরের লালায় ভাইরাসটি থাকে কিন্তু বাদুরের কোনো ক্ষতি করে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খেজুরের কাঁচা রস পানে মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়। এর বাইরে গাছের নিচে পড়ে থাকা অর্ধখাওয়া ফল খেলেও নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী, নওগাঁ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, পাবনা ও নাটোর জেলার ১০ জন নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে বলে আইইডিসিআর বলছে। এই জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নওগাঁ সদরে দুইজন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে একজনের। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে তিনজন আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যু হয়েছে দুইজনের এবং রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে একজন আক্রান্ত হলে এ একজনেরই মৃত্যু হয়েছে। পাবনা ঈশ্বরদীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এখানে একজনকেই নিপাহ ভাইরাসে শনাক্ত করা হয়েছে। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে একজন আক্রান্ত হলেও তিনি এখনো বেঁচে আছেন। অপর দিকে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় একজন আক্রান্তের পর তিনি মারা গেছেন। আইইডিসিআর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ছয়জন পুরুষ আক্রান্ত হয়েছে নিপাহ ভাইরাসে। তাদের মধ্যে চারজন মারা গেছে। চারজন নারীর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
আইইডিসিআর বলছে, খেজুরের রস সংগ্রহের সময় তাতে মিশে যাওয়া বাদুড়ের লালা থেকে মানবদেহে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। শুধু রস বা পাখি খাওয়া ফল নয়, আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলেও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার থাকে। খেজুরের রস গাছের যে অংশ থেকে পড়ে সেখানে রাতের বেলা বাদুড় চেটে রস পান করে। রসের অবশিষ্ট নিচের হাড়িতে গিয়ে জমা হয়। এ রস কাঁচা পান করলেই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আইইডিসিআরের চিকিৎসকরা বলছেন, রস জ্বাল দিয়ে পান করতে হবে।
সোর্স : নয়া দিগন্ত