মিয়া হোসেন: এবার বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ধর্মীয় বাধ্যতামূলক ইবাদাত পবিত্র হজ¦ পালনে। ডলার ও রিয়ালের দাম বৃদ্ধির কারণে হজ্বের ব্যয় বৃদ্ধি হলেও তা আরো কমানো যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পবিত্র উমরা পালন করতে যেখানে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে সেখানে পবিত্র হজ্ব পালনে একজনের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৭ লাখ টাকা। উমরাহ পালনের প্রায় ৫গুণ টাকা। চেষ্টা ও আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ব্ওে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেকের পক্ষে হজ্ব পালন করা সম্ভব হবে না। এমন কী করোনার আগে যারা হজ্বের টাকা জমা দিয়েছিলেন ৪ লাখ টাকার প্যাকেজে তাদেরকেও এবার হজ্ব যেতে হলে ৭ লাখ টাকার প্যাকেজে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় দিয়ে পবিত্র হজ্ব পালন করা অনেকের পক্ষেই কষ্ঠকর হয়ে যাচ্ছে। হজ্ব এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হজ্বের ব্যয় আরো কমানো যেত। বিমান ভাড়ার মূল্য ডলারে পরিশোধ করতে হয় না। তাই বিমান ভাড়া না বাড়ালে হজ্ব ব্যয় আরো কমতো বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সরকারি ও বেসরকারি হজ্ব প্যাকেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারি প্যাকেজে হজ্বের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা আর বেসরকারি (হাব) ঘোষিত হজ্ব প্যাকেজে ব্যয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এতে বেসরকারি প্যাকেজে এমনিতেই ১০ হাজার ৩৯৭ টাকা কম রয়েছে। এর বাইরে কুরবানির জন্য আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এবারের প্যাকেজে বিমান ভাড়া ও রিয়ালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্যাকেজের মূল্য বেড়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু বিমান ভাড়া বাড়ানোর কোন ধরনের যৌক্তিক কারণ তুলে ধরতে পারেনি সরকার। উমরাহ পালনে যেখানে বিমান ভাড়া বাবদ ব্যয় হয় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা সেখানে পবিত্র হজ্বের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। হাবের পক্ষ থেকে একটি টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে বিমান ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিমান তা না করে নিজেরাই নিজেদের ভাড়া নির্ধারণ করেছে বলে দাবি করেছে হাব।
এ বিষয়ে হাবের সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, এবার সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে বিমানের ভাড়া। প্রায় ৬০ হাজার টাকার মতো বিমান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিমানের পক্ষ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। হাবের পক্ষ থেকে একটি টেনিক্যাল কমিটি করে যৌক্তিক বিমান ভাড়া নির্ধারণ করার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা না করে নিজেরাই নিজেদের ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, উমরায় বিমানের ভাড়া ১ লাখ টাকা মতো হয়ে থাকে। আর অন্যান্য এয়ারলাইন্সে ৭৮ থেকে ৮০ হাজার টাকায়ও উমরায় যাওয়া যায়। সে হিসেবে বিমানের ভাড়া এবার না বাড়ালোও পারতো। এতেই হজ্বের ব্যয় বেশি বেড়েছে বলে তিনি মনে করছেন।
এবার হজ্ব প্যাকেজের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর রিয়ালের মূল্য ছিল ২১ টাকা, এখন সেই রিয়ালের মূল্য ৩০ টাকা। এক লাখ টাকার বেশি এখানেই চলে আসে। আনুষঙ্গিক ব্যয় খুব একটা বাড়েনি। বিভিন্ন খাতে সমন্বয় করে এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।
বিমানভাড়া সর্ম্পকে তিনি বলেন, এবার হজ্বযাযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানভাড়া বেড়েছে। বিমানভাড়া নিয়ে আমরা বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনদিন বসেছি। বর্তমান সময় আমাদের অনুকূলে না থাকার কারণে বিমানভাড়া বাড়াতে হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গত বছর হজ্বযাত্রীদের বিমানভাড়া ছিল এক লাখ ৪০ হাজার। আগের মতো তিনটি বিমান সংস্থা (বিমান বাংলাদেশ, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ও নাস এয়ার) এবারও হজ্বাযাত্রীদের পরিবহন করবে বলেও জানান তিনি।
গত পাঁচ বছরের হজ্বের খরচ: গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে; প্রতি বছরই হজে¦র ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ২০২২ সাল: সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং বেসরকারিভাবে ‘সাধারণ প্যাকেজে’র মাধ্যমে খরচ হয় পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। ২০২১ সাল: সরকারিভাবে হজ্ব যেতে প্রথম প্যাকেজে খরচ হয় ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২০ সাল: এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি হজ্বের প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হলেও কোভিড মহামারির কারণে ওই বছর বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ্বে যেতে পারেননি। ওই বছর ঘোষিত হজ্ব প্যাকেজ-১ ছিল চার লাখ ২৫ হাজার টাকার। ২০১৯ সাল: সেবার প্যাকেজ-১ ছিল চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকার। ২০১৮ সাল: প্যাকেজ-১ ছিল তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকার, প্যাকেজ-২ তিন লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকার। প্রসঙ্গত, চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ্বে অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর হজ্বে পালনে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় হজ্বে চুক্তি করে বাংলাদেশ।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম