কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত পানিসাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি এবং পলিশেড নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন প্রকল্পের কেনাকাটার দাম প্রস্তাবে অসংগতি পাওয়া গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ট্রে ও ফ্যান কিনতে কয়েক গুণ বেশি দাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, মেলা ও সেমিনার আয়োজনের জন্যও বড় ধরনের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৪০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৫ উপজেলায় তা বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, প্রকল্পটিতে একেকটি চারা রোপণের ট্রে কিনতেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০০ টাকা। যেখানে বাজারে এসব ট্রে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ১০০ টাকায়। তিন হাজার ট্রে কিনতে ২১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে, যেগুলোর দাম বাজারে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে দুই হাজার ১০০টি এয়ার সার্কুলেশন ফ্যান কিনতে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। একেকটি ফ্যান কিনতে ৫০ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে, যা বাজারে আট থেকে ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রের দাম জানতে বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কৃষি যন্ত্রপাতির বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কৃষি বন্ধুর ওয়েবসাইটে ৫০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ট্রে বিক্রি হচ্ছে। অ্যাগ্রোবাংলার ওয়েবসাইটে ৬০ টাকায় ট্রে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন বিপণন কর্মকর্তা জানান, ৬০ টাকার এই ট্রে অনেক ভালো মানের। কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রির আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যেই এসব ট্রে বিক্রি হয়। বাজারে সর্বোচ্চ কত দামের ট্রে পাওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার ট্রে রয়েছে।
এদিকে এয়ার সার্কুলেশন ফ্যানের দাম জানতে কয়েকটি ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যানস ডিরেক্টের ওয়েবসাইটে একেকটি ফ্যান ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চীনের ওয়েবসাইট মেড ইন চায়না ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন ধরনের অ্যাগ্রিকালচারাল ফ্যান বিক্রি করছে। ইন্ডিয়া মার্ট ওয়েবসাইটে এই ধরনের বেশির ভাগ ফ্যানই ১০ হাজার টাকার মধ্যে।
ট্রের অস্বাভাবিক দাম প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ‘ট্রের বিভিন্ন দাম আছে। ৩০০ টাকারও আছে, ৫০০ টাকারও আছে আবার ৭০০ টাকারও আছে। কী দিয়ে বানানো হয়েছে, সেটার ওপর নির্ভর করে দাম। আমরা ভালোটাই কিনব।’ এয়ার সার্কুলেশন ফ্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বাইরে থেকে এই ফ্যান কিনব। প্রকল্প অনুমোদন হতে হতে দাম আরো বাড়বে। কারণ ডলারের দাম বেড়ে গেছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়বে। এই ফ্যান বাংলাদেশে নেই। ট্রায়াল বেসিসে দেশের বাইরে থেকে আনা হবে।’
বেশি দামে পণ্য কেনার প্রস্তাবের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘কোনো পণ্যের দাম বেশি ধরা থাকলে সেটা প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় কমানো হবে। কোনো ক্ষেত্রেই বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হবে না। বিষয়টি দেখা হবে।’
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক সেচ প্রযুক্তি ও পলিশেড নির্মাণের মাধ্যমে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ২৩ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, ১২ হাজার মেট্রিক টন ফল এবং ৫৮৩ লাখ ফুল উৎপাদন করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, স্মার্ট ক্লাইমেট টেকনোলজি ব্যবহার, সৌরশক্তিচালিত পাম্পের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার হবে এবং প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৩৫০ জন কৃষকের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও পুষ্টি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা হবে।
সোর্স : কালের কন্ঠ