রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে রাশিয়া যাবে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল। প্রকল্পের নির্মাণ কাজে রাশিয়ার দেয়া ঋণের কিস্তি এবং ঠিকাদারদের পাওনা টাকা পরিশোধের উপায় খুঁজতে প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ ছাড়া দুই দেশের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তি সংশোধনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি এবং প্রকল্পকেন্দ্রিক সৃষ্ট আর্থিক জটিলতা নিরসনে গতকাল বৈঠক করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরমাণু শক্তি কমিশন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিনিধিসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পেমেন্ট জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। রাশিয়ার দেয়া ঋণের কিস্তির টাকা ফেরত ও ঠিকাদারদের পাওনা টাকা পরিশোধের উপায় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। ডলার কিংবা রুবলের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ সম্ভব না হওয়ায় পেমেন্টের একটি সেইফ মুড খোঁজার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিজ্ঞাপন
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের কারণে কিস্তির টাকা পরিশোধ বন্ধ আছে।
এ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি ও ভার্চ্যুয়াল মিটিং হয়েছে। রূপপুর বিদ্যুকেন্দ্রকে অগ্রাধিকার প্রকল্প উল্লেখ করে এসব মিটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, ভিডিও কনফারেন্স কিংবা টেলিফোনে যেসব আলোচনা হয়েছে তা কার্যকরী হচ্ছে না। তাই স্বশরীরে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক প্রয়োজন। এজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পরমাণু শক্তি কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলকে রাশিয়া পাঠানো প্রয়োজন। প্রতিনিধি দল পেমেন্টের একটি সেইফ মুড খোঁজার পাশাপাশি ঋণ চুক্তির একটি ধারা সংশোধনের বিষয়ে কথা বলবে। প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে বাংলাদেশের তরফ থেকে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে কথা হয়েছে। কীভাবে দ্রুত প্রকল্পটির কাজ শেষ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, বৈঠকটি একান্তই ঘরোয়া বৈঠক ও মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব। এখানে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। রাশিয়ায় প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো একান্তই ভেতরের আলোচনা। বাইরে বলার কোনো বিষয় না।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া সফরকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ প্রস্তুতি কাজ সম্পাদনের জন্য স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি আইজিএ এবং স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন (১ম পর্যায়) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই বছর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথমপর্যায় কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এখন পর্যন্ত রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় বা মেয়াদ কোনোটাই বাড়াতে হয়নি। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। ২০১৩ সালে চুক্তি হওয়া ঋণের টাকার কিস্তি পরিশোধ শুরু হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা স্যাংশনের কারণে কিস্তির টাকা ডলারে পরিশোধ বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প মুদ্রা হিসেবে রাশিয়া রুবলে কিস্তির টাকা পরিশোধের অনুরোধ জানালেও তা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এর প্রেক্ষিতে কিস্তির টাকা পরিশোধের তাগিদ দিয়ে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশকে অনুরোধ করে রাশিয়া।
সোর্স : মানবজমিন