ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকের তারল্যসংকট মোকাবিলায় নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রবাসী আয়ের বিপরীতে সরকার যে প্রণোদনা দেয়, তার বিপরীতে টাকা ধার নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি শিল্প ও সেবা খাত এবং সিএসএমএমই খাতে যে প্রণোদনা ঋণ রয়েছে, তাতে সরকারের দেওয়া সুদ ভর্তুকির বিপরীতেও টাকা ধার নিতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মুদারাবা লিকুইডিটি সাপোর্ট (এমএলএস) নামে টাকা ধার দেওয়ার নতুন ধরনের সুবিধা চালু করেছে।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য এমন কোনো সুযোগ নেই। সংকটে পড়ার কারণে শরিয়া ব্যাংকগুলোর জন্য সুবিধা চালু করা হয়েছে। নতুন এ সুবিধার মেয়াদ হবে ৭, ১৪ ও ২৮ দিন। এই সুযোগ গতকাল থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ইসলামি ব্যাংকগুলো সাধারণত সুকুক বন্ডের বিপরীতে টাকা ধার নেয়। কিন্তু সম্প্রতি সংকটে পড়ায় সুকুক বন্ড রেখে এসব ব্যাংক টাকা ধার নিয়েছে। তাদের হাতে জামানত রাখার মতো আর কোনো সুকুক নেই। এমন পরিস্থিতিতে নতুন এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালা জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সুষ্ঠু তারল্য ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ৭, ১৪ ও ২৮ দিন মেয়াদি বিশেষ তারল্য সুবিধা এমএলএস চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি ব্যাংক প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যে পরিমাণ সরকারি প্রণোদনা দিয়েছে, তার ৯০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ ধার করতে পারবে। একইভাবে শিল্প ও সেবা খাত এবং সিএসএমএমই খাতে যে প্রণোদনা ঋণ রয়েছে, তাতে সরকারের দেওয়া সুদ ভর্তুকির ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ধার করতে পারবে। এই টাকায় মুনাফার হার হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তিন মাস মেয়াদি মুনাফার সমান। কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা ও তার বেশি পরিমাণ টাকা ধারের জন্য ব্যাংকগুলোকে আবেদন করতে হবে। এই টাকা ধার করতে হলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আবেদন করতে হবে। মেয়াদ পূর্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে ধারের টাকা কেটে নেওয়া হবে।
এর আগে তারল্যসংকটে পড়া ইসলামি ব্যাংকগুলোকে সুকুক বন্ড জমা দিয়ে সমপরিমাণ টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৩১ জানুয়ারি হাতে থাকা সব সুকুক বন্ড জমা দিয়ে ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ধার নেয় পাঁচ ইসলামি ব্যাংক। ব্যাংক পাঁচটি হলো ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এদিকে গত বছরের শেষ দিনে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে এই পাঁচ ব্যাংককে কোনো জামানত ছাড়া প্রায় ১৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সুবিধা আইনবহির্ভূত। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সুবিধা দেয় না।
কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু তারল্য সহায়তা দিয়ে এই সংকট মেটানো যাবে না। এতে আরও লুটপাট বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ক্ষমতা প্রয়োগ করে এ সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।’
সোর্স : প্রথম আলো