শুরুতেই দু’একটি জাতীয় দৈনিকের কিছু শিরোনামের উল্লেখ করা যাক। নাম যা কিছুই হোক না কেন, সব সংবাদের মূলকথাই আজকাল এক রকম- সেগুলো পণ্যের মূল্য সংক্রান্ত। যেমন ৩ ফেব্রুয়ারি সংখ্যা দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘দাম কমছেই না, বরং বাড়ছে’। রিপোর্টে দৈনিকটি লিখেছিল, ‘সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের মতো দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। দ্বিমুখী চিড়েচ্যাপ্টা হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত’। উদাহরণ দেয়ার জন্য রিপোর্টে যেসব পণ্যের মূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সেগুলোর মূল্যও এরই মধ্যে আবার বেড়ে গেছে। যেমন ওই রিপোর্টে মুরগির ডিমের ডজন ১২৫-১৩৫ টাকা বলা হয়েছিল। কিন্তু একই ডিমের মূল্য বেড়ে ৪ ফেব্রুয়ারি হয়েছে ১৪৫ টাকা। ৫ ফেব্রুয়ারি দোকানীরা বলেছে, ডিমের দাম আরো বাড়বে।
ওদিকে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ বর্ধিত হার কার্যকর হয়েছে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে। বাড়ানো হয়েছে পাঁচ শতাংশ হারে। শুধু তা-ই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে জানিয়ে রাখা হয়েছে, গ্রাহকদের জন্য পাঁচ শতাংশ হারে বাড়লেও পাইকারি পর্যায়ে নতুন করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য বাড়ানো হবে। বৃদ্ধি বা বৃদ্ধির পরিমাণের কারণে শুধু নয়, মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধানের কারণেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন গ্রাহকরা। এর কারণ, মাত্র কিছুদিন আগে, গত ১২ জানুয়ারি থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেবারও পাঁচ শতাংশ হারেই বাড়িয়েছিল বিইআরসি। এ প্রসঙ্গে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য তথ্যটি হলো, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাইকারি পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১১ বার এবং গ্রাহক পর্যায়ে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এবারের বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য তিন টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে চার টাকা ১৪ পয়সা। বিইআরসি একই সঙ্গে জানিয়ে রেখেছে যে, স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য আরো এক দফা বাড়ানো হবে।
একযোগে পণ্যের মূল্যও বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ‘খরচের চাপে হিমশিম জীবন’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি দৈনিকের প্রধান রিপোর্টে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের লাফিয়ে বেড়ে চলা দামের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রথম আট বছরে রাজধানী ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৮১ শতাংশ। অর্থাৎ ২০০৯ সালে ১০০ টাকায় যা কিছু কেনা যেতো সেগুলোই ২০১৬ সালে কিনতে লেগেছে ১৮১ টাকা। রিপোর্টে প্রধান কয়েকটি ব্যয়ের পরিসংখ্যানও রয়েছে। যেমন প্রথম আট বছরে বিদ্যুতের জন্য ব্যয় বেড়েছিল ৯৩ শতাংশ; পানি ও বাসভাড়া বেড়েছিল ৫৬ ও ৪৫ শতাংশ হারে। ২০০৯ সালে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ২৩ টাকা; ২০১৬ সালে সে চালই কিনতে হয়েছে ৩৫ টাকা দরে। চালের বিষয়ে একই রিপোর্টে আবার ভিন্ন তথ্যও জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ৩৫ নয়, ২০১৭ সালে এসে মোটা চালের জন্য মানুষকে এমনকি ৫০/৫৫ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। চালের দাম ক্রমাগত আরো বেড়েছে এবং মানুষের ‘গলা কেটে’ কোনো কোনো চালের দাম প্রতি কেজির জন্য এমনকি ৮০-৯০ টাকাও আদায় করা হয়েছে।
চাল এবং নিত্য পণ্যের মূল্য সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য-পরিসংখ্যানও বেরিয়েছে বিভিন্ন রিপোর্টে। কিন্তু সেদিকে যাওয়ার আগে জানানো দরকার, ২০০৯ সালে রাজধানীর সাধারণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দুই কক্ষের একটি বাসার মাসিক ভাড়া ছিল ১০ হাজার ৮০০ টাকা; ২০১৬ সালে সে একই বাসার ভাড়া বেড়ে হয়েছিল ১৯ হাজার ৭০০ টাকা। বর্তমান সময়ে অর্থাৎ ২০২৩ সালে অমন একটি বাসার জন্য কম করে হলেও ২৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।
২০০৯ সালে ৩২০ টাকায় যে সুতি শাড়ি পাওয়া যেতো, ২০২৩ সালে সে একই শাড়ির জন্য দিতে হচ্ছে ১৭০০ টাকা। অনেকাংশে একই হারে বেড়েছে অন্য সব পণ্যের দামও। এভাবে পণ্যের মূল্যের সঙ্গে মানুষের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনের বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন দি ইকনোমিস্ট-এর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট তার সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলেছে, ঢাকা বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ‘সবচেয়ে ব্যয়বহুল’ নগরীতে পরিণত হয়েছে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অর্জনের ক্ষেত্রে ঢাকা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন হয়ে পড়া বাংলাদেশের জন্য এ এক বিরাট ‘সার্টিফিকেট’ই বটে!
এমন একটি সার্টিফিকেটের জন্য সবদিক থেকে মূল্য গুনতে হয়েছে উচ্চ ও মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষকে। কারণ চালসহ নিত্যপণ্যের দাম শুধু যে বেড়েছে তা নয়, বেড়েছেও লাফিয়ে লাফিয়ে। ওপরে উল্লেখিত ১২-১৩ বছরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিগত তিন-চার মাসের মধ্যে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে অবিশ্বাস্য পরিমাণে। ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরেও কিনতে হয়েছে সবচেয়ে মোটা ও বাজে জাতের চাল, যা নিতান্ত বিপদে না পড়লে হতদরিদ্র মানুষেরাও সাধারণত কিনে খায় না। এরই পাশাপাশি নাজির ধরনের চিকন ও উন্নত মানের চালের দাম উঠে গেছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়। বিভিন্ন স্থানে চালকল ও চালের গুদামে অভিযান চালানোসহ সরকারের কোনো পদক্ষেপেই কোনো কাজ হয়নি। কোথাও কোথাও কিছু মিল মালিককে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হলেও মজুদকৃত চালের হদিসই পাওয়া যায়নি। এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। মিল মালিকরা সোজা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা বেশি মুনাফার লোভে গোপনে কোনো চাল মজুদ করেননি। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি যে, মিল মালিক বা অন্য কোনো গোষ্ঠী সত্যিই গোপনে চালের মজুদ গড়ে তুলেছে এবং বেশি দামে চাল বিক্রি করছে। ফলে একদিকে সরকারের সকল অভিযান ব্যর্থ ও লোক দেখানো হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, অন্যদিকে চালের বাজার অনিয়ন্ত্রিতই থেকে গেছে। এখনো অবস্থায় শুভ কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এজন্য আবার খুচরা বিক্রেতাদেরও দোষ দেয়া যাচ্ছে না। তাদের বরং ধন্যবাদ দিয়েছেন অনেকে। কারণ, তারাই বাজারে সরবরাহ ও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে বেশি দামে হলেও মানুষ অন্তত চাল কেনার সুযোগ পাচ্ছে। অর্থাৎ কেনার জন্য খোলা বাজারে অন্তত চাল পাওয়া যাচ্ছে।
ওদিকে সবজিসহ অন্য সকল পণ্যের দামও কেবল বেড়েই চলেছে। সকল গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, প্রতি কেজি ৬০/৭০, এমনকি ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচা মরিচ তো রেকর্ডই করে ফেলেছে। মাঝখানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৩০০ টাকারও ওপরে চলে গিয়েছিল। পরে কমলেও ১২০/১৪০ টাকার নিচে আর নেমে আসেনি। একটি জাতীয় দৈনিক রীতিমতো তামাশার স্টাইলে লিখেছে, কাঁচা মরিচের দাম দিয়ে আজকাল মাছ-মাংস এবং মুরগিও কেনা সম্ভব। মানুষ এমনকি এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম দিয়ে দুই কেজি পেঁয়াজও কিনতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিষয়টি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। তথ্যাভিজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে একবার কাঁচা মরিচের দাম ১০০ টাকা হয়েছিল। তখন পবিত্র রমযান মাস চলছিল। রমযানের শেষের দিকে ঈদ করার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেয়ার ‘ঝাল’ বুঝুক! পরিহাসের বিষয় হলো, সে একই নেত্রীর নেতৃত্বে গঠিত সরকারের অধীনে ১০০ বা দেড়-দুইশ নয়, তিনশ’ টাকা কেজি দরেও কাঁচা মরিচ খেতে হয়েছে! প্রধানমন্ত্রীর অবশ্য ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। কারণ, মানুষ কাঁচা মরিচের ‘ঝাল বুঝুক’ ধরনের কথা তাকে শুনতে হয়নি। শুনতে যাতে না হয় সে ব্যবস্থা তার সরকার এবং পুলিশই করে রেখেছে!
বলা দরকার, সবজি ও কাঁচা মরিচের পাশাপাশি বেড়েছে মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য সব পণ্যের দামও। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৬ সালে চার দলীয় জোট সরকার বিদায় নেয়ার পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত। অর্থাৎ সব পণ্যের দামই কেবল বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে মানুষের আয়-রোজগার কিন্তু বাড়েনি। তাদের জন্য চাকরি বা ব্যবসারও সুযোগ সৃষ্টি করেনি সরকার। সে কারণে সাধারণ মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। তাদের আসলে নাভিশ্বাস উঠেছে। জানা গেছে, তিন কোটির বেশি মানুষ এরই মধ্যে দু’ বেলা পেট ভরে খেতে পারছে না। ফলে দুর্ভিক্ষের আশংকা করছেন তথ্যাভিজ্ঞজনেরা। তাদের মতে, দেশে আসলে অঘোষিত দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সব মিলিয়ে বাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তা সত্ত্বেও মানুষকে বাজারে যেতেই হচ্ছে। বেশি দাম দেয়ার সাধ্য না থাকলেও বাজারে না গিয়ে পারছে না তারা। এমন অবস্থায় সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, দেশে আদৌ কোনো সরকার রয়েছে কি না। কারণ, কোনো পণ্যের দামই রাতারাতি বাড়েনি। ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যানে জানা গেছে, দাম বেড়ে আসছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে। কিন্তু কোনো পর্যায়েই ধমক দেয়ার এবং লম্বা আশ্বাস শোনানোর বাইরে মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ের ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যেও সরকারকে সততার সঙ্গে নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি। এখনো যাচ্ছে না।
বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও সরকার সম্ভাবনাময় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মন্ত্রীরা কেবল ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেয়ার ভয় দেখিয়েছেন। একজন চাকরিজীবী হলেও পুলিশের আইজি পর্যন্ত ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের’ হুমকি দিয়ে বেড়িয়েছেন। অন্যদিকে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো হচ্ছে না। দাম কমছে না কোনো পণ্যেরই। এমন অবস্থায় ভুক্তভোগী মানুষ না ভেবে পারছে না যে, কথিত ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের’ সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের অতি চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে বলেই কোনো ধমকে কান পর্যন্ত দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আর অতি চমৎকার সম্পর্কের পেছনে যে চাঁদা ও কমিশনই প্রধান ফ্যাক্টর বা নির্ধারকের ভূমিকা রাখে সে কথাটাও কাউকে বুঝিয়ে বলতে হচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এমনকি প্রকাশ্যেও দৃশ্যপটে এসেছেন। এ ধরনের সহজবোধ্য কিছু কারণে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই ব্যবসায়ীরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে যথেচ্ছভাবেই। দামও চলে যাচ্ছে মানুষের নাগালের অনেক বাইরে। এক কথায় বলা যায়, পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো সফলতাই দেখাতে পারেনি সরকার। সুচিন্তিত ঔদাসীন্যের আড়ালে সরকারের প্রশ্রয় বরং ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। যার মাশুল গুনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের তো বটেই, নাভিশ্বাস উঠছে এমনকি মধ্যবিত্তদেরও।
প্রসঙ্গক্রমে জানানো দরকার, জীবনযাত্রার যে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা কিন্তু কেবলই চাল-আটা-তেল এবং মাছ-মাংস ও সবজি ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের জন্য বাড়েনি। এখানে বাসা ভাড়া, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানির বিল থেকে কেবল টেলিভিশনের জন্য ডিশ অ্যান্টিনার সংযোগ ফি ও মাসিক ভাড়া এবং কাজের লোকের বর্ধিত বেতন পর্যন্ত হিসাবে ধরা হয়েছে। বেড়ে গেছে এমনকি ময়লা ফেলার জন্য মাসিক টাকাও। এভাবে সব মিলিয়েই বেড়ে চলেছে জীবনযাত্রার ব্যয়।
অর্থাৎ মূল্য ও ব্যয় শুধু খাদ্যের বাড়ছে না। এসবের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য যানবাহনের ভাড়া যেমন বাড়ানো হচ্ছে তেমনি বাড়ানো হচ্ছে বাড়ি ভাড়াও। অর্থাৎ বিক্রেতা থেকে বাস, রিকশা ও সিএনজিসহ যানবাহনের মালিকরা তো বটেই, বাড়িওয়ালারাও যার যার ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য দাম বাড়িয়ে চলেছেন। মাঝখান দিয়ে চিড়েচ্যাপ্টা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষমতাসীনদের কথা অবশ্য আলাদা। কারণ, মানুষের যখন জিহবা বেরিয়ে পড়ছে তখনও কল্পিত সফলতার ঢেঁকুর তুলে বেড়াচ্ছেন তারা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, অসৎ ও মুনাফাখোর টাউট ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় ও সহযোগিতা দেয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত কঠোরতার সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এবং পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনা। চাল, চিনি, সয়াবিন ও আটার মতো জরুরি পণ্যগুলো ওএমএস-এর মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা নিলেও মানুষের উপকার হতে পারে। মনিটরিং করে যথেচ্ছভাবে দাম বাড়ানোর কার্যক্রমকে প্রতিহত না করা গেলে পণ্যের দাম আরো বাড়তেই থাকবে এবং সরকারের কথিত ‘কঠোর নজরদারি’র কোনো সুফলই মানুষ ভোগ করতে পারবে না। কারণ, সব মিলিয়ে বাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তা সত্ত্বেও মানুষকে বাজারে যেতেই হচ্ছে। কারণ, তিন বেলা না হোক, দু’বেলা তো খেতে হবে। স্ত্রী-সন্তানদের মুখেও খাবার তুলে দিতে হবে। সুতরাং বেশি দাম দেয়ার সাধ্য না থাকলেও বাজারে না গিয়ে পারছে না তারা।
এদিকে মূল্যস্ফীতির দাপটে কমে যাচ্ছে মানুষের প্রকৃত আয়। সব মিলিয়েই মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। কোনো একটি প্রসঙ্গেই এখন আর শতকরা হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। বলা যাচ্ছে না, অমুক পণ্যের দাম এত শতাংশ বেড়েছে। এমন অবস্থা অবশ্যই চলতে পারে না। সরকারের উচিত কঠোরতার সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ও পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনার পাশাপাশি আর্থিক খাতেও দুর্নীতি কমিয়ে আনা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এমন হওয়া দরকার দেশ যাতে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। এসব বিষয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দগুলোর সঙ্গে শুধু নয়, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও সরকারের পরামর্শ করা উচিত। কারণ, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া মানুষের কোনো উপায় থাকে নাÑ যার পরিণতি কোনো সরকারের জন্যই ভালো হওয়ার কথা নয়।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম