বিএনপি’র এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া সংসদীয় আসনে গতকাল ভোট হয়েছে। এসব আসনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল মাত্র ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। মাইকিং করেও কেন্দ্রে আনা যায়নি ভোটারদের। ভোটার খরার কারণ হিসেবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে- সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, ভোটের ফলাফল সরকার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই যাবে। এজন্য তারা ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়েছে। এ ছাড়া হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়েও অনেকে ভোট দিতে যায় না।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছে মাত্র ৬৫ হাজার ৮২৩ জন। অর্থাৎ এই আসনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল মাত্র ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮১৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছে মাত্র ৫১ হাজার ৪৯ জন। এই আসনে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বেশি ছিল।
বিজ্ঞাপন
সেটাও মাত্র ৩৮ শতাংশ। অন্য আসনেও তেমন একটা ভোট পড়েনি।
ভোটার উপস্থিতি কম থাকার কারণ হিসেবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, সাধারণ ভোটাররা এখন মনে করেন, ভোটের ফলাফল সরকার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই যাবে। এজন্য তারা ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়েছে। এ ছাড়া অন্য দলের ভোটারদের উপস্থিত না হওয়ার জন্য হুমকি দেয়ার ঘটনাও দেখা গেছে। হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়েও অনেকে ভোট দিতে যায় না। তিনি বলেন, একজন দলছুট নেতাকে জেতানোর জন্য বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টার কারণটাও মানুষ এখন বোঝে। ফলে সবকিছু মিলিয়ে মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ কমেছে।
উপস্থিতি কম কেন, সেই ব্যাখ্যায় কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ায় উপস্থিতি কম ও নিরুত্তাপ হতে পারে। তবে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও ভোট শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
গতকাল ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, অনিয়ম বা কারচুপির উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়ে নজর রেখেছি, সেখানেও বিরূপ কোনো তথ্য পরিবেশিত হতে দেখিনি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তথ্য পেয়েছি, দু’একটি জায়গায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে; একটি ককটেল তাজা পাওয়া গেছে। দু’একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে যেটা কেন্দ্রের বাইরে।
সিইসি বলেন, আমরা যে তথ্য পেয়েছি, সিসি ক্যামেরা ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটগ্রহণ বলা চলে সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে হয়েছে। ইভিমের ভোট, দু’চার ঘণ্টার মাধ্যমে ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘোষণা ?শুরু হবে।
অনেক কেন্দ্রে ভোটকক্ষে অবাঞ্চিত লোকের উপস্থিতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, দু’একটি কেন্দ্রে এমন তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। একটি কেন্দ্রে এক ভদ্রমহিলা তার দুটো বাচ্চাকে নিয়ে ঢুকেছে, আরেকটি জায়গায় এক ভদ্রমহিলা অসুস্থ ভোটারকে সহায়তা করতে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন। এগুলো হতে পারে। আমরা এগুলোকে খুব গুরুতর বা ব্যাপক (অনিয়ম) মনে করছি না, যেটা ভোটের ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে। ওই ধরনের ঘটনা মনে হয়নি। কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে গণমাধ্যমে এখান থেকে দেখছিলাম- এমন কিছু দেখিনি যে, ভোট কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি হচ্ছে, ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে।
সোর্স : মানবজমিন