হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলপিজি’র দাম। এক সপ্তাহে খুচরায় ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ৬০০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো সিলিন্ডার পাঠাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন এজেন্ট ও খুচরা বিক্রেতারা। মঙ্গলবার ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তালতলার মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজে দেখা গেছে, তারা বসুন্ধরা কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম চাইছে ১৮৫০ টাকা। অন্যদিকে নাভানা কোম্পানির একই পরিমাণের সিলিন্ডারের দাম চাইছে ১৭০০ টাকা। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে মায়ের দোয়ার স্বত্বাধিকারী নাসির মিয়া বলেন, কোম্পানিগুলো গত কয়েকদিন ধরে এলপিজি’র দাম বাড়িয়েছে। প্রতিদিনই ৫০ টাকা করে দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলো থেকে সংকটের কথা বলা হচ্ছে। তালতলা বিএনপি বাজারের রাতুল ইলেকট্রিক এন্ড এলপিজি গ্যাসের কর্মচারী বিল্লাল বলেন, আমরা নাভানা কোম্পানির এলপিজি গ্যাস বিক্রি করি।
বিজ্ঞাপন
গ্যাসের দাম অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া গ্যাসের অনেক সংকট রয়েছে। অগ্রিম টাকা দিয়ে গ্যাসের অর্ডার দেয়া হলেও কোম্পানি থেকে গ্যাস দেয়া হচ্ছে না। এলপিজি’র দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তালতলার আল করিম নামের একটি খাবার হোটেলের মালিক আল করিম বলেন, গ্যাসের দাম হঠাৎ করেই অনেক বেড়েছে। ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম এখন ১৭০০ টাকা। অন্যদিকে ৩৬ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার ৪৪০০ টাকা। অথচ সরকারের ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১২৩২ টাকা। তিনি আরও বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ১২ কেজির দাম ১৩০০ টাকা আর ৩৬ কেজির দাম ৩৯০০ টাকা ছিল। আটা, তেল, চিনি, চালসহ সবকিছুর দাম এভাবে বাড়লে তো হোটেল ব্যবসা করে টিকে থাকা যাবে না। এদিকে দেশে এলপিজি গ্যাসের কোনো সংকট নেই জানিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের কাছে গ্যাসের সংকটের কোনো তথ্য নাই। বরং দেশে যথেষ্ট পরিমাণে এলপিজি মজুত আছে। তিনি বলেন, দাম বাড়ার কথা আমাদেরকে দু’জন জানিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে রশিদ চেয়েছি। কিন্তু তারা রশিদ দিতে রাজি হননি। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, রশিদ দিলে তাদের কাছে কোম্পানিগুলো গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেবে। রশিদ দিলে আমরা ভোক্তা অধিকারে মামলা করতাম। তিনি বলেন, আমাদের কাজ দাম নির্ধারণ করা, বাজার মনিটরিং করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এটা করবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গ্যাসের দাম বাড়ালে বিইআরসির কি কোনো কিছুই করার নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মমর্তা বলেন, আছে, আমরা আগামী সপ্তাহে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসবো। সেখানে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হবে। ওদিকে বাজারে এলপিজি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়টি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দেখে। এটা তাদের বিষয়, আমাদের না। তবে কোনো ভোক্তা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ জানায়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। নিজ উদ্যোগে এখানে কিছু করার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি এটা করি, তখন বিইআরসি বলবে এখানে ভোক্তা নাক গলাচ্ছে। তাহলে এলপিজি’র বাজার মনিটরিং কি আপনারা করেন না? তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা কাজ করি। মাঝখানে একটা অভিযোগ এসেছিল, সেই কাজ আমরা করেছিলাম। আমরা যখন নিজের থেকে যাই, তখন দাঁড়ায় আমরা সমস্ত জায়গায় হাত দিচ্ছি। এটা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিষয় তো, তখন বলবে ভোক্তা অধিকার সব জায়গায় নাগ গলাচ্ছে।
সোর্স : মানবজমিন