দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের না থাকায় বিবর্তনবাদী কুলাঙ্গার ও নাস্তিক্যবাদীদের আত্মস্বীকৃত উত্তরসূরীরা নৈশভোটের সরকারের ঘাড়ে চেপে জাতিকে ধর্মহীন, নাস্তিক ও উন্মাদ বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি রাজধানীতে পাঠ্যপুস্তকে বিবর্তনবাদ, সমকামীতাকে উৎসাহ প্রদান, হিজাবসহ ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী প্রচারণা, মুসলিম শাসনের নামে কুৎসা রটনা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি বিষয়ক অধ্যায় সংযুক্ত এবং সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে শিক্ষা কারিকুলাম থেকে আপত্তিকর অধ্যায় প্রত্যাহার করার দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মিরপুর-১০ গোল চত্তর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেওড়া পাড়া এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দীন, মু. আতাউর রহমান সরকার, নাসির উদ্দীন এবং শহীদুলুল্লাহ ও ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমূখ। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সমাবেশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে পথচারীসহ কয়েক জনকে আটক করে।
ড. রেজাউল করিম বলেন, তথাকথিত বিবর্তনবাদ অপ্রমাণিত, অবৈজ্ঞানিক, কল্পিত ও অনুমান নির্ভর হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আধুনিককালের অধিকাংশ বিজ্ঞানী ডারউইনের মতবাদকে বিভ্রান্তিকর, অনুমাননির্ভর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করে মানবজাতিকে ঐশ্বরিক শক্তির সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছেন। পবিত্র কালামে হাকীমের সুরা আল আলাক্বের ২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যিনি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাটবাঁধা রক্ত থেকে’। এছাড়াও কালামে পাকের সূরা হিজরের ২৮, সূরা শূরার ১১, সুরা রা’দের ৩ ও সূরা নেসার ১ নং আয়াত সহ অনেক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৃষ্টি তত্ত¡ সম্পর্কে মানব জাতিকে সুষ্পষ্টভাবে অবহিত করেছেন। কিন্তু সরকারের গণবিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে নাস্তিক্যবাদীরা দেশের ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীকে প্রান্তিকতায় ঠেলে দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি মাধ্যমে নিজেরা ফায়দা হাসিল করতে চায়। কিন্তু দেশের আত্মসচেতন জনতা ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র কোন ভাবেই সফল হতে দেবে না বরং যেকোন মূল্যে দেশ, জাতিস্বত্ত¡, ইসলাম ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।
তিনি বলেন, সরকার নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্য বই প্রণয়নের করতে ফাটা, ফুটা ও তলাহীন কথিত বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। এসব অজ্ঞদের প্রণীত বইগুলো ভুলে ভরা, ইতিহাস বিকৃতি ও চৌর্যবৃত্তি সর্বস্ব। মূলত, এরা আত্মস্বীকৃত অপরাধী। তাই এদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন যে, প্রণীত পাঠ্যসূচিতে ইসলামী বিরোধী কিছু নেই। অথচ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্য বইয়ে পরিকল্পিতভাবে বিবর্তনবাদ ও সমকামীতার পৃষ্ঠপোষকতা, হিজাব ও মুসলিম শাসকদের নিয়ে কটুক্তি এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী বিষয়গুলো দেখেও না দেখার ভান করে নিজেকে চক্ষুষ্মান অন্ধে পরিণত করেছেন। তিনি অবিলম্বে পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের তাহজিব-তামুদ্দুন বিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানান। অন্যথায় এজন্য সরকারকেই জনগণের কাছে জবাবদিহী করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম এখন নতুন শতাব্দীর জন্য উদীয়মান শক্তি। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রা থামানোর জন্য বিজাতীয় শক্তি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সম্প্রতি সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে উগ্রবাদীরা পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করে পুরো মুসলিম উম্মাহর কলিজায় আঘাত দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে কুরআনে অগ্নিসংযোগকারী উগ্রবাদীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় বিশ্বমুসলিম সুইডেনের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হবে।
মহানগরী সেক্রেটারি বলেন, সরকার জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে বর্ষীয়ান জননেতা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে অন্যায় করে গ্রেফতার করে কারা নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা চলমান আন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সরকার কেয়ারটেকারের গণদাবি কোন ভাবেই পাশ কাটাতে পারবে না। তিনি টালবাহানা পরিহার করে অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আ ন ম শামসুল আলম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় সরকারকে একগুয়েমীর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।