সরকার গণআন্দোলনে ভীত ও গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতেই বর্ষীয়ান জাতীয় নেতা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি আজ সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলায় জড়িয়ে কারা নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশ এসব কথা বলেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাতিরঝিল মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, এ্যাভোকেট জিল্লুর রহমান, কুতুব উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার নোমান আহমেদী, ইউসুফ আলী মোল্লা ও ছাত্রনেতা সালাহউদ্দিন প্রমূখ।
ড. রেজাউল করিম বলেন, সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নতুন করে তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন করার জন্য দিবাস্বপ্নে বিভোর। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই তারা নতুন করে বিরোধী দলের ওপর দলন-পীড়ন শুরু করেছে। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও রাজপথে সভা-সভাবেশ প্রত্যেক নাগরিক সাংবিধানিক অধিকার হলেও সরকার পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে জনগণকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। সরকার বিরোধী শিবিরকে নেতৃত্বশূণ্য করে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যই আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ জাতীয় নেতাদের গ্রেফতার করে জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে।
তিনি অপরাজনীতি ও অবৈধ ক্ষমতালিপ্সা পরিহার করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কারারুদ্ধ সকল আলেম, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে আমীরে জামায়াতকে বিজয়ীর বেশে মুক্ত করবে-ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সরকার পতনাতঙ্কে এখন অপমৃত্যুর প্রহর গুণছে। তারা এখন অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে নানা ধরনের গুজব, মিথ্যাচার, ছলচাতুরী ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছে। তারা মিথ্যাচারকে জাতীয়করণ করার পর এখন বিদেশী কূটনীতিক ও সম্মানিত মেহমানদের নামেও নিলর্জ্জ মিথ্যাচার শুরু করেছে। তারা মার্কিন মন্ত্রী ডোনাল্ড লু‘র নামে মিথ্যাচার করে বর্হিবিশ্বে দেশ ও জাতির সম্মানহানী ঘটিয়েছে। তারা নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে আসন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে চায়। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র জনগণ কখনোই সফল ও স্বার্থক হতে দেবে না। তিনি ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান। অন্যথায় সরকারের জন্য লজ্জাজনক পরিণতি অপেক্ষা করছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত ১৪ বছরে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে দফায় দফায় ১০ বার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। সরকার এই মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিমাসে দাম সমন্বয়ের নামে প্রকারান্তরে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পথ আগেই উম্মুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই গ্যাসের দাম আবারো বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। মূলত, সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও ভ্রান্তনীতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে এবং জনজীবনে তীব্র সঙ্কট চলছে। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ সকল দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় যখন লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সরকারের এই গণবিরোধী ও আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত রীতিমত ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই ব্যর্থ এবং গণবিরোধী সরকারকে অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। তিনি সরকার পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানান।
মহানগরী সেক্রেটারি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতা আসে তখনই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই তারা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারা কথিত কুদরতে খুদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। তারা এবার সম্পূর্ণ অঘোষিতভাবে দেশের পাঠপুস্তকে বস্তাপচা ডারউইনের বিবর্তনবাদ অধ্যায় যুক্ত করে দেশের জাতির সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কিন্তু সচেতন জনতা সরকারের এই দেশ ও জাতিস্বত্তা বিরোধী অপতৎপরতা কোন ভাবেই মেনে নেবে না। তিনি অবিলম্বে পাঠপুস্তক থেকে নাস্তিক্যবাদী অধ্যায় প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় সরকারকে জনগণের তোপের মুখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।