জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনতা কোনভাবেই রাজপথ ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জামায়াতের শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে প্রতিবন্ধকতার প্রতিবাদ, হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ১০ দফা দাবি আদায়, আমীরে জামায়াতসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ২০০৭ সালের আজকের এই দিনে মঈন উ আহমদের নেতৃত্বে কতিপয় অতিউচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে একটি সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করে দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। হত্যা করা হয়েছিল গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে। অথচ আমাদের স্বাধীনতার মূল চেতনাই ছিল অবাধ গণতন্ত্র চর্চা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা। আর সে চেতনাকে ধারণ করেই আমাদের মুক্তিসংগ্রামে অগণতি মানুষ জীবন দিয়েছেন, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও স্বাধীনতার স্বপ্নগুলো আজও আমাদের কাছে প্রায় ক্ষেত্রেই অধরায় রয়ে গেছে। স্বাধীনতাত্তোর সরকার দেশে গণতন্ত্র হত্যা করে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। মাত্র ৪ টি পত্রিকা বাদে সকল পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে লগি-বৈঠার পৈশাচিক তান্ডবের মাধ্যমে প্রকাশ্যে দিবালোকে রাজপথে মানুষ পিঠিয়ে হত্যা করে লাশের ওপর নাচানাচি মাধ্যমে ইতিহাসের সকল নির্মমতা ও বর্বরতাকে হার মানিয়েছিল।
তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের সম্ভাব্য প্রধানের বিরুদ্ধে দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগে আওয়ামী-বাকশালীরা সারাদেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আর সেটিকে অজুহাত বানিয়ে সেনাসমর্থিত সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে দেশে বিরাজনীতিকরণ শুরু করে দেয়। দেশের বরেণ্য রাজনীতিকদের জেলে পাঠিয়ে নিজেরা লাগামহীন দুর্নীতি শুরু করে দেয়। পরে তারা নিরাপদ প্রস্থানের শর্তে পাতানো ও যোগসাজসী নির্বাচনের মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠায় বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় আনে। ২০১৪ সালে আবরো ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কবর রচনা করা হয়। পরবর্তীতে নৈশভোটের সরকার প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কবর রচনা করা হয়। আর হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই জনগণ আবারো রাজপথে নেমে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। ১৯৭৫ সালে তারা দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। ১/১১-এর মাধ্যমে তারা তারা জরুরি সরকার কায়েম করে আবরো গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরেছিল। তারা দাবি করেছিল জরুরি সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। আর সে ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি গায়ের জোরে বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে প্রহসনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল। তিনি ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলের পুলিশী হামলা ও আমীরে জামায়াতের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সকল রাজনৈতিক দল গণমিছিলের অনুমতি পেলেও রহস্যজনকভাবে জামায়াতকে অনুমতি দেয়া হয়নি। কিছু লোককে অনুমতি দিয়ে কিছু লোককে বাধা প্রদান কোন ভাবেই আইনসঙ্গত নয়। এক দেশে দুই আইন কখনো চলতে পারে না।
ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত বলেন, জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর জমীনে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত, আল্লাহর আইনই পারে বিশ্বমানবতার সকল সমস্যার সমাধান দিতে। মূলত, ইসলামী সরকারের কাজ হলো সালাত কায়েম, যাকাত আদায়, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। কিন্তু দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত না থাকায় রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে দেশকে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার কোন বিকল্প নেই। তিনি সরকারকে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াতসহ সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন । অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। তারা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রের মৌলিকত্ব, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা রক্ষায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফেলানীসহ সীমান্ত হত্যার জন্য তারা কোন জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি বরং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই এই ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য সকলকে জামায়াতে পতাকাতলেও এক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।