গতকাল শুক্রবার নিত্যপণ্যের মূল্য ছিল স্বাভাবিক -সংগ্রাম
স্টাফ রিপোর্টার : পৌষের শীতের এ সময়ে শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে রাজধানীর প্রতিটি বাজার। সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি মিললেও মাছের বাজার অন্যান্য সময়ের মতো এখনও চড়া যাচ্ছে। ফলে মাছের বাজারের উত্তাপে ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েই গেছে। তবে বাজারে মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, হাজিপাড়া, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা ও মধ্যবাড্ডাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু মাংসের দাম আগের মতো হলেও মাছের বাজারে উত্তাপ দেখা যায়। বাজারে কাঁচা সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০, পেঁয়াজের ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকা আঁটি, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকা, নতুন লাল আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা। অন্যদিকে বাজারে আগের মতোই চড়া মাছের দাম। বাজারে চাষের কই মাছ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, চাষের পাঙাস মাছ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২০০ টাকা, দেশী মাগুর প্রতি কেজি ৭০০, রুপচাঁদা ১০০০ টাকা কেজি, শোল মাছ প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, ট্যাংড়া মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠায় দাম কমেছে। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। তাতে কমে এসেছে আমদানি ও পুরোনো দেশী পেঁয়াজের দামও। সেগুলো এখন কেজিতে ৫ টাকা কমে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা এবং রসুন ৮০-১০০ টাকা।
এছাড়া মাংসের দামে খুব একটা পরিবর্তন নেই। রয়েছে গত সপ্তাহের মতোই। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, সোনালি মুরগির প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, কক মুরগি প্রতি কেজি ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে লাল ডিম প্রতি হালি ৪০ টাকা, এছাড়া হাঁসের দাম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান জানান, শীত আসার পর থেকে বাজারে সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম কমেছে, এছাড়া প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ রয়েছে সবজির। পুরো শীতকাল জুড়েই সবজির দাম এমন কমই থাকবে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি আসায় বাজারে দাম স্বাভাবিক আছে। ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি দাম। বিশেষ করে আগে ঢাকার বাজারে দক্ষিণাঞ্চল থেকে খুব একটা সবজি আসতো না। তবে এবার সবজি সরবরাহে দক্ষিণাঞ্চল যুক্ত হওয়ায় দাম নাগালের মধ্যে আছে।
ক্রেতা আফতাব উদ্দিন জানান, বাজারে শীতের সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। যার ফলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা সবজি কিনে স্বস্তি পাচ্ছে। কিন্তু মাছের বাজার আগের মতোই নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। প্রতিটি মাছের দাম অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়েছে। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা যে মাছগুলো কেনে অর্থাৎ- রুই, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, কই মাছ এগুলোর কোনোটাই ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। এছাড়া ভালো বা দামি মাছ তো কিনতেই পারে না সাধারণ ক্রেতারা।
দীর্ঘদিন পর কমতির দিকে চালের দাম। তবে শুধু মোটা চালের দামই কমেছে। স্বর্ণা ও পাইজাম জাতের চালের দাম কমেছে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। তবে এখনো অপরিবর্তিত সরু চালের দাম। এছাড়া বাজারে শীতের সবজির দামও বেশ কম। ডজনে ৫ টাকা কমেছে ডিমের দামও। রামপুরা বাজারের বিক্রমপুর চাল ভান্ডারের বিক্রেতা শুকুর আলী জানান, আমনের মোটা চাল বাজারে এসেছে। ফলে এখন চালের সরবরাহ ভালো। এ কারণে মোটা চালের দাম কমেছে। স্বর্ণা জাতের চাল আগে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতো। সেটা এখন ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি কমেছে পাইজাম জাতের চালের দাম। আগে ৫৮-৬০ টাকার চাল এখন ৫৫-৫৭ টাকায় নেমেছে। সরবরাহ ভালো থাকলে মোটা চালের দাম আরও কমতে পারে। তবে চিকন চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। আগের দামেই আছে। তিনি জানান, সাধারণ মানের বি আর-২৮ চালের কেজি ৬৪-৬৬ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭৪ টাকা এবং ভালো মানের নাজিরশাইল ৭৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
অন্যদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের সপ্তাহের মতো গতকাল প্রতি কেজি ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সোনালি ২৫০ টাকা ও দেশী মুরগি ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শীত আসায় বাজারে বেড়েছে হাঁসের মাংসের কদর। প্রতি কেজি দেশী হাঁস ৫৫০-৬০০ টাকা ও পিস প্রতি রাজহাঁস ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমেছে। বর্তমানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা ডজন। পাইকারি বাজার থেকে কিনলে আরও ৫ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। সবজি-চালের বাজারে স্বস্তির খবর থাকলেও কোনো সুখবর নেই মুদি পণ্যে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম ১১৫-১২০ টাকা কেজি। কমেনি মসুর ডাল ও আটা-ময়দার দাম। খুচরায় প্রতি কেজি মসুর ডাল এখনো ১৩০-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আটার দাম ৭০ টাকা ও ময়দা ৭৫ টাকা।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম