বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট সংস্করণ
FacebookTwitterLinkedInWhatsAppCopy LinkEmailPrint
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বাজেটের আকার প্রতি বছর বড় হচ্ছে। রাজস্ব আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে ঘাটতি মেটাতে বাড়ছে ঋণনির্ভরতা। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার (জুলাই-অক্টোবর) মাসে সরকারের নিট অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেয়া হয়েছে ২২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সুদহার কমাসহ বিভিন্ন কারণে সঞ্চয়পত্রেও বিনিয়োগ কমছে। ফলে ঋণ সংগ্রহে চাপ বাড়ছে দেশের ব্যাংক খাতে।
জানা গেছে, সরকার চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এ ছাড়াও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ৩৫ হাজার কোটি টাকা নেয়ার টার্গের নির্ধারন করে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি কম হওয়ায় ব্যাংকের উপর চাপ বাড়ছে। এতে করে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতে একের পর এক নামে বেনামে ঋণ নিচ্ছে। এতে করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আতঙ্কিত গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে সঞ্চয় প্রত্যাহার করছে। ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে। ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিতে পারছে না আবার বেসরকারি খাতে ঋণও দিতে পারছে না। এতে করে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। যদিও এ বাজেটের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে ঘাটতি বাজেটের খাতায়। দেশের জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশই বাজেট ঘাটতি। এ ঘাটতি বাজেট পূরণের জন্য বিদেশী উৎসের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও ঋণ নেয় সরকার। এর মধ্যে জনগণের কাছ থেকে সরাসরি ঋণ নেয়া হয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে। আর পরোক্ষ ঋণ নেয়া হয় ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ট্রেজারি বিল-বন্ড বিক্রির মাধ্যমে।
চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণে আলোচ্য বছরে ব্যাংক খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার মাসে মোট লক্ষ্যমাত্রার ২১ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে এসময় ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা।
এদিকে সুদহার কমাসহ বিভিন্ন কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে। একটি সময় মধ্যবিত্ত পরিবারের বিনিয়োগের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিলো সঞ্চয়পত্র। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর পেনশনের টাকা এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতে বাড়তি টাকা থাকলেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা হতো। মাস শেষে মুনাফা হিসাবে যে অর্থ পাওয়া যেতো তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসারের খরচ চালাতে পারতো। তবে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কারণে কমছে বিনিয়োগের পরিমাণ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৬৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কমেছে। ফলে খাতটি থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ আগের তুলনায় কমেছে।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম