রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ত্রুটির কারণে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন ভোটাররা। ইভিএম নিয়ে সাধারণ ভোটারদের অজ্ঞতা এবং শ্রমজীবী মানুষসহ অনেকের আঙ্গুলের ছাপ না মিলায় অনেকগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বিলম্ব হয়েছে। বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র থেকে এমন অভিযোগ করেছেন ভোটার ও প্রার্থীরা।
ইভিএম নিয়ে হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমরা আগে থেকেই বলেছি ইভিএম’এ এ ধরনের ত্রুটি হতে পারে। রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সমস্যা হলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আমার বেলায় যদি ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে সাধারণ ভোটারের ক্ষেত্রে কী হবে এটা ভেবে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে বয়স্ক নারী ও পুরুষ ভোটাররা সারিতে অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে জাপার প্রার্থী বলেন, ওই সময়ে বেলা ৩টার মধ্যে ৭০-৭৫ শতাংশ ভোট দেয়া হয়ে যেতো। কিন্তু এবার অনেক ভোটারের কাছে স্মার্ট কার্ড থাকার পরও তারা ভোট দিতে পারছেন না।
ইভিএম’র ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, অভিযোগটি অসত্য নয়। আমরা বলেছি যে, ইভিএম’র গতি অবশ্যই ব্যালটের চেয়ে ধীর হবে। এমনও হতে পারে এটা ইভিএম’র সেকেন্ড বা থার্ড জেনারেশন। আর নৌকার গতি রকেটের গতি সমান নয়।
বিজ্ঞাপন
ইভিএম-এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং করিয়ে, বায়োমেট্রিক দিয়ে নিশ্চিত করা হয়। সেটা ব্যালটে হয়ে থাকে না। এখানে একটা পজিটিভ সাইট হচ্ছে, ইভিএম-এ কোনো রকম কারচুপি, একজনের ভোট আরেকজন দেয়া এই জিনিসটা হচ্ছে না।
জাপার প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, জাপার একজনের ভোট দিতে অসুবিধা হয়েছিল। পরে তিনি ভোট দিয়েছেন। আমরা বলেছি প্রযুক্তিতে সমস্যা হতে পারে। এখানে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে। অনেক প্রার্থী তাৎক্ষনিকভাবে হয়তো দিতে পারেননি, পরপরই দিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বলে দিচ্ছি, সেনিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে, কারো কারো মিলে যাচ্ছে, কারো কারো মিলছে না। তাদের বলা হচ্ছে আপনারা পরে আসেন। যাদেরটা মিলছে না তাদের সরিয়ে দিয়ে যাদেরটা মিলছে তাদের ভোট নিয়ে নিতে বলছি। যাদের মিলছে না তাদের ভোটটা পরে নেয়া হবে। এভাবে আমরা ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি। অন্যদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেছেন, ইভিএম-এ আঙ্গুলের ছাপ শনাক্ত ছাড়া তেমন কোনো ত্রুটি ছিল না। সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে।
ভোট দিতে গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে জাপা প্রার্থী মোস্তফা
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে এসে যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ার অভিযোগ তুলেছেন, জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। গতকাল সকাল সোয়া ৯টার দিকে তিনি নগরীর আলমনগর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে মোস্তফা আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে না পেরে ভোটকেন্দ্রের মাঠে ফেরত আসেন। এর কুড়ি মিনিট পর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা তাকে নিয়ে আবার ভোটকক্ষে যান। সেখানে আঙুলের ছাপ মেলার পর ভোট দিতে পারেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম ইভিএমে অনেক ভোট নষ্ট হওয়ার শংকা রয়েছে। সেইসাথে ভোটপ্রদান খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। আমার সকল ভোটার তাদের ভোট দিতে পারবে না। আমি নিজেই ভোট দিতে গিয়ে হাতের ছাপ না মেলায় ভোট কক্ষ থেকে ফিরে এসেছিলাম। এরপর কারিগরি ত্রুটি সারানো হলে আমি ভোট দিতে পারি। আমার বিজয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। তবে সুষ্ঠুভাবে ভোটাররা যেন ইভিএমে ভোট দিতে পারে এটা কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।
লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১১টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী তার নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি যখন ভোট দিতে যান তখন একজন ভোটার গোপন কক্ষে ভোট দিচ্ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবে সেই ভোটারের ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কেউ ভোট দিতে পারবেন না। মূলত এই ঘটনাই ঘটেছিল। তিনি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়েছেন।
সোর্স : মানব জমিন