দেশের অন্যান্য সাধারণ বা বিশেষ আইনের মতো সংবিধানও একটি আইন; তবে সংবিধানের সাথে সাধারণ বা বিশেষ আইনের পার্থক্য হলো এটি দেশের সর্বোচ্চ আইন, এ আইনের সংশোধন পদ্ধতি সাধারণ আইন বা বিশেষ আইন হতে ভিন্নতর এবং সাধারণ বা বিশেষ আইন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে সংবিধান প্রাধান্য পায়।
পৃথিবীর সব দেশে আইনের সংশোধন, তা সংবিধান বা সাধারণ বা বিশেষ আইন যা-ই হোক না কেন, একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেকোনো গতিশীল সমাজে আইনের সংশোধন বিশেষত সংবিধান বা এর যেকোনো বিধানকে সংশোধন অযোগ্য করা হলে তা সমাজের পরিবর্তনশীলতার নিরিখে সময় ও যুগের চাহিদা মেটাতে পারে না। তাই পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলো সংবিধান বা এর কোনো বিধানের সংশোধন জটিলতর করা হলেও বারিত করা হয়নি।
আমাদের সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদটি সংবিধান দ্বিতীয় ও দ্বাদশ সংশোধন আইন দ্বারা দু’বার এবং দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন) আদেশ দ্বারা একবার সর্বমোট তিনবার সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধন আইন দ্বারা ১৪২ অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপন করা হয়।
’৭২-এর সংবিধানে ১৪২ অনুচ্ছেদের যে অবস্থান তাতে পর্যায়ক্রমিকভাবে বলা ছিল-এ সংবিধানে যা বলা হয়েছে তা সত্ত্বেও (ক) সংসদের আইন দ্বারা এ সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধিত বা রহিত হতে পারবে; তবে শর্ত থাকে যে, (অ) অনুরূপ সংশোধন বা রহিতকরণের জন্য আনীত কোনো বিলের সম্পূর্ণ শিরোনামায় এ সংবিধানের কোন্ বিধান সংশোধন বা রহিত করা হবে বলে স্পষ্টরূপে উল্লেখ না থাকলে বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা যাবে না; (আ) সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যুন দু-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত না হলে অনুরূপ কোনো বিলে সম্মতিদানের জন্য তা রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হবে না; (খ) উপরিউক্ত উপায়ে কোনো বিল গৃহীত হওয়ার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট তা উপস্থাপিত হলে উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করবেন; এবং তিনি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে।
সংবিধান দ্বিতীয় সংশোধন আইন দ্বারা (ক) উপদফায় বর্ণিত ‘সংশোধিত বা রহিত’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘সংযোজন, পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হয়। উপরোক্ত সংশোধনী বলে (ক) উপদফার (অ) শর্তাংশে ‘সংশোধনী বা রহিতকরণের’ শব্দগুলো ‘সংশোধনীর’ শব্দটি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় এবং একই শর্তাংশ হতে ‘সংশোধন’ শব্দটির পরবর্তীতে বর্ণিত ‘বা রহিত’ শব্দদ্বয় অবলুপ্ত করা হয়। উপরোক্ত সংশোধনী দ্বারা ১৪২ অনুচ্ছেদে (২) দফা সন্নিবেশন করে বলা হয় এ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত কোনো সংশোধনের ক্ষেত্রে ২৬ অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই প্রযোজ্য হবে না। তা ছাড়া উপরোক্ত সংশোধনী দ্বারা ১৪২ অনুচ্ছেদকে উক্ত অনুচ্ছেদের (১) দফারূপে পুনঃসংখ্যাত করা হয় এবং অনুচ্ছেদটির হাশিয়ায় অবস্থিত ‘সংশোধন বা রহিতকরণের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘সংশোধনের’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থাৎ ১৪২ অনুচ্ছেদ বিষয়ে -’৭২-এর সংবিধানের হাশিয়ায় উল্লেখ ছিল সংবিধানের বিধান ‘সংশোধন বা রহিতকরণের ক্ষমতা’ যা সংশোধন পরবর্তী ‘সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা’ রূপে উল্লিখিত হয়।