বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে গত ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে তরুণ চিকিৎসক তার এক পুত্রকেও সরকার জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছিল। ডা. শফিককেও গ্রেফতারের পর প্রথমত, সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয় এবং বলা হয় যে, তিনি পুত্রের জঙ্গী সংশ্লিষ্টতাকে উৎসাহিত করেছেন এবং নিজেও জঙ্গী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। সাতদিন রিমান্ডের পর পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন যে, ডা. শফিকের বিরুদ্ধে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়নি। তাকে আদালতে হাজির করে পুনরায় রিমান্ড চাওয়া হয় এবং আদালত আরো তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তার গ্রেফতার এবং রিমান্ডের ব্যাপারে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি অত্যন্ত দৃঢ় ঈমানদীপ্ততার পরিচয় দেন। তিনি বলেন যে, এতে তিনি বিচলিত নন, কেননা তার রাসূল (সা.)ও বিনা অপরাধে সাড়ে তিন বছর জেল খেটেছেন। তাকে যারা গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছেন তারা সুপথের পরিবর্তে কুপথ এবং জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের পথ বেছে নিয়েছেন। তার এই প্রতিক্রিয়া ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে। আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি কামনা করছি।
জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান অত্যন্ত সজ্জন ও দেশপ্রেমিক একজন নেতা। দেশে হোক অথবা বিদেশে যখন যিনি বা যারা মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন ডা. শফিক তাৎক্ষণিকভাবে তার সংগঠনকে নিয়ে তাদের পাশে সাহায্যের ঢালি নিয়ে হাজির হয়েছেন। বন্যা, অগ্নিকাণ্ড, নৌকাডুবি, লঞ্চডুবি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস যখন যেখানেই মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়েছে সেখানেই তিনি সবার আগে হাজির হয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করেছেন ও একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার এই জনপ্রিয়তা এবং সাম্প্রতিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের অংশগ্রহণের ঘোষণা স্বৈরাচার সরকারের হৃদকম্পের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তার গ্রেফতার তারই অভিব্যক্তি বলে মানুষ মনে করে। বর্তমান সরকার জামায়াতের বিরুদ্ধে তার প্রতীক ও নিবন্ধন বাতিল, মারা, কাটা, হত্যা, ফাঁসি, গ্রেফতার প্রভৃতি যেভাবে জায়েজ করে নিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতা হিসেবে ডা. শফিক জঙ্গী তৎপরতার সাথে জড়িত হবেন এটা দেশের মানুষ এমনকি পাগলেও বিশ্বাস করে না। সরকার তার পায়ের নিচের মাটি হারিয়ে এখন যা করছেন তা নিছক পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। আসলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এখন রবীন্দ্রনাথের কেষ্টায় পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। যেখানে যত অপকর্ম হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার, তার দল এবং তাদের অনুসারী পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেলসমূহ এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা সেখানেই জামায়াত-শিবিরের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দলটিকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রমাণ করার জন্য গত ১৪ বছরের অপপ্রচার একটা যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে এই দলটিকে নির্মূল করার জন্য সর্বাত্মক শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করা হয়েছে। পুলিশ-র্যাব-বিজিবির সাথে এই বাহিনীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং রাজনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জামায়াত-শিবিরের প্রতিশ্রুতিশীল নেতা কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত ও নিয়ন্ত্রিত বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংস্থাগুলোতে লুটপাট করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। সরকার এমন সব অপপ্রচার চালিয়েছেন, মনে হয়েছে যেন বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা জামায়াত-শিবির এবং এই সংস্থাটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারলে এই দেশে আর কোন সমস্যা থাকবে না। দেশের মানুষের সুখ শান্তির পথে বিরাজমান সকল বাধা সরে যাবে। সরকারের অনুপ্রেরণা, প্ররোচনা ও অপপ্রচারে প্রতিবেশী ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ এমনকি আমলারাও সকল প্রকার কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করে এই দলের অস্তিত্বকে তাদের স্বার্থের এবং অস্তিত্বের পরিপন্থী বলে মনে করছেন এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন সময়ে রহস্যজনক হামলা এবং তাদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের যেসব অবাঞ্ছিত এবং নিন্দিত ঘটনা ঘটছে তার জন্য জামায়াতকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের অত্যন্ত প্রাচীনতম একটি দল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পূর্বে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে এই দলটি তার কোনটিতেই অনুপস্থিত ছিল না। তার উপস্থিতি ছিল সক্রিয় ও সরব। পঞ্চাশের দশকে শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ষাটের দশকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে গঠিত সম্মিলিত বিরোধী দল (Combined Opposition party-COP) এবং পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি বা Democratic Action Committee (DAC)-এর সাথে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের সাথে জামায়াত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একসাথে কাজ করেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধেও ১৯৮৬ সাল থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছে। ১৯৯২ সাল থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জামায়াত একসাথে কাজ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বিএনপির সাথে জামায়াত জোট গঠন করার পর ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াতকে আওয়ামী লীগ শত্রু হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে। অবশ্য এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে জামায়াত বিএনপিকে সরকার গঠনে নিঃশর্ত সমর্থন দেয়ার পর থেকে। এই সময় জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সরকার গঠনের জন্য বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ, কারোরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ৫টি মন্ত্রীপদের প্রস্তাব দিয়ে সরকার গঠনের সমর্থন চেয়েছিল। কিন্তু জামায়াত তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বরং কোন প্রকার মন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করেই বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল। ফলে দলটি আওয়ামী লীগের বিরাগভাজন হয়েছিল। আগেই বলেছি জামায়াত বাংলাদেশে খুবই প্রাচীন একটি দল। এই দলটি ক্ষমতালিপ্সু কিংবা বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় বা নেশায় রাজনীতি করে না। শুধু এই উপমহাদেশে নয় সারা বিশ্বে নির্ভেজাল তৌহিদপন্থী একটি দল হিসেবে জামায়াত সুপরিচিত। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জন করাই জামায়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তারা নেতা-কর্মীদের ব্যাপক শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন এবং কুরআন সুন্নাহ ইসলামী আইন ও তার ভিত্তিতে আকীদা বিশ্বাস ও চরিত্র গঠনে দলটি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি এই দলের সামগ্রিক কর্মকা-ের একটি অংশ মাত্র। বাংলাদেশ সরকারও এ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। ইসলামী বিশ্বাস এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্ব পরিহার না করার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে এবং এই দলটির ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চলছে। জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু সরকার প্রতিবাদের সকল পথ তাদের জন্য রুদ্ধ করে দিয়েছে। তাদের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল এবং মানববন্ধন করে প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। সরকার বিক্ষোভরত জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই গুলীতে ও নির্যাতনে এ যাবত জামায়াত-শিবিরের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এই নির্দেশ ও গুলী করে মানুষ হত্যার ঘটনা ইতঃপূর্বে আর কখনো ঘটেনি। জামায়াত শিবিরের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে অস্ত্র দিয়ে দমন করতে গিয়ে সরকারই সন্ত্রাস করছেন এবং তার দায় জামায়াতের ওপর চাপাচ্ছেন। জামায়াতের দু’জন মন্ত্রী চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন। ঐ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মন্ত্রিত্বকালে তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ-রিসওয়াত এমনকি ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল বা অপচয়ের কোন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত অথবা তার ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি বা নৈরাজ্য সৃষ্টির কোন অভিযোগ ছিল না বা তা প্রমাণিত হয়নি। যেমন আছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে।
জামায়াতকে ২০ দলীয় জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এখন তাকে নন্দঘোষ বানানোর সকল পন্থা কাজে লাগানো হচ্ছে। পত্রিকাগুলো, বিদেশী সংস্থা এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহলের বাংলাদেশ সংক্রান্ত মন্তব্য ও পরামর্শসমূহকে বিকৃত করে প্রচার করছে। বলা হচ্ছে তারা বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের দৃষ্টিতে জামায়াত বিএনপি জোটে থাকার কারণেই বিএনপি দেশের জন্য কিছু করতে পারছে না। দলটি খুবই ভালো এবং তারা দেশ ও জাতিকে অনেক কিছুই দিতে পারে। বিএনপি নেত্রীকে যখন অত্যন্ত অপমানকরভাবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হলো, তার ছেলেদের উপর নির্মম অত্যাচার চলল, এমনকি মৃত আত্মীয়াকে দেখার ব্যাপারেও একে-অপরের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হলো না, বিএনপির দফতরকে কারাগার বানানো হলো, বন্ধ করে দেয়া হলো, বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের জন্য মই বেয়ে দোতলায় উঠে অফিস তছনছ করে ডাকাতির আসামীর ন্যায় তাদের থানায় নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হলো, তাদের সকল নাগরিক ও গণতান্ত্রিক এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো, তখন এসব সুহৃদরা কোথায় ছিলেন আমি জানি না। তবে এসব ঘটনা ইতিহাসে কালো অক্ষরে লেখা থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। ২০ দলীয় জোট একটি নির্বাচনী জোট। এই জোট এখন নেই। জামায়াত পরনির্ভরশীল কোনও দলও নয়। জামায়াতকে নিয়ে বর্তমানে যে বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে এই বিতর্ক আদর্শিক ও রাজনৈতিক। ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বন্দ্বের একটি অধ্যায় মাত্র। এখানে তারা সকল প্রকার মিথ্যাচারকে ব্যবহার করছে। এতে অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাগুমের ঘটনা ঘটছে। ঈমানদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু তাদের ঈমানী শক্তি দুর্বল হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন সরকারের ধারাবাহিক সকল অপকর্মের উপর থেকে দেশ-বিদেশের মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই সংখ্যালঘুদের ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা হয়, তাদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট লুট করা হয়, অগ্নিসংযোগ করা হয়। মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়। এর দোষ চাপানো হয় জামায়াত-শিবিরের ওপর। এদেশে কারা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণে পারদর্শী দেশবাসী সে সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। বিভিন্নস্থানে এসব অপকর্ম ও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের দায়ে যারা ধরা পড়েছেন, পুলিশে হস্তান্তরিত হয়েছেন তাদের সিংহভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। জামায়াতের কেউ নন। কিন্তু দোষটা দেয়া হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ওপর। সংখ্যালঘু সংস্থাগুলো এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরাও একথা স্বীকার করেছেন যে, জামায়াত তাদের ওপর অত্যাচার করছে না। কিন্তু গোয়েবলস-এর নাতিপুতিদের নিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। জামায়াতের পক্ষ থেকে বার বার এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
জামায়াত আমীর ডা. শফিক আওয়ামী সরকারের নোংরা রাজনৈতিক খেলার নির্মম শিকার। বিএনপিকে এতদিন তারা নপুংষক আখ্যা দিয়ে বললেন যে, তারা আন্দোলন করতে জানে না। এখন তারা যখন ঘুরে দাঁড়িয়ে সবগুলো বিরোধীদলকে নিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন তখন সরকার চোখে অন্ধকার দেখছেন। তারা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে জেলে পুরেছেন। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া কারাবন্দী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়াকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ^াস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিনসহ বহু নেতাকর্মী কারাগারে। অনুরূপভাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমীর মাওলানা শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দকেও জেলে পুরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারাগারে আটক করে দল দু’টিকে নেতৃত্বশূন্য করার মাধ্যমে তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এবং পুনরায় অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছেন। এই স্বপ্ন দেশের মানুষ সফল হতে দিতে পারে না। দেশে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবেই।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম