বাজার সেই আগের মতোই। কোন সুখবর নেই। রোববার থেকে প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও ছয়দিন পরও তা কার্যকর হয়নি। ১৮ই ডিসেম্বর থেকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ৫ টাকা কমে ১৮৭ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজধানীর খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে আগের নির্ধারিত ১৯২ টাকা। এদিকে গত রোববার থেকে সরকারের পক্ষে পাম অয়েলের দাম ৪ টাকা কমানো হয়েছে। এটিও ওইদিন থেকে কার্যকর হয়নি। আবার এক মাসের আগে চিনির দাম ১০৮ টাকা (প্যাকেট) নির্ধারণ করার পরও ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিল থেকে নতুন দামের তেলের সরবরাহ নেই।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি আগের বেশি দামের তেল বিক্রিও শেষ হয়নি। কোম্পানিগুলো এখনো নতুন দরে তেল বাজারে ছাড়েনি। এ কারণে বেশি দরেই তেল বিক্রি হচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, কোনো পণ্যের দাম বাড়ার ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে যায়। কিন্তু দাম কমলে দেখা যায় এর উল্টোটা।
গত ১৫ই ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকার বিপরীতে ১৮৭ টাকায় বিক্রি করতে হবে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকার বিপরীতে ১৬৭ টাকায় বিক্রি করতে হবে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯২৫ টাকার বিপরীতে ৯০৬ টাকায় বিক্রি করতে হবে। আর প্রতি লিটার পাম অয়েল (সুপার) ১২১ টাকার বিপরীতে ১১৭ টাকায় বিক্রি করতে হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৮ই ডিসেম্বর থেকে এ দাম কার্যকরের কথা বলা হলেও কোনো বাজারেই কার্যকর হয়নি।
খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানান, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৭২ টাকায়। পাশাপাশি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর পাম অয়েল (সুপার) প্রতি লিটার ১৩৫-১৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
শুধু বোতলজাত সয়াবিন তেল নয়, খোলা পাম তেলও নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হওয়ার কথা ১১৭ টাকায়, যা ১২০ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানিরা জানান, মিল থেকে এখন পর্যন্ত নতুন দামের তেলের সরবরাহ নেই। এ ছাড়া ডিলাররাও নতুন দামের তেল সরবরাহ করছে না। দোকানে বেশি দামের কেনা তেল এখনো বিক্রি শেষ হয়নি। এসব কারণে দাম কমানো হলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। নতুন তেল এলে এবং আগের বেশি দামের কেনা তেল শেষ হলে বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি হবে।
সেগুনবাগিচা বাজারের মুদি দোকানি হোসেন আলী বলেন, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমছে। কিন্তু কোম্পানি সেই তেল এখনো সরবরাহ করেনি। সে কারণে পুরনো দরের তেল বিক্রি হচ্ছে। চিনিও নির্ধারিত দামে আমরা কিনতে পারছি না। এ কারণে বিক্রি করতে পারছি না। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সেটা বাধ্য হয়েই।
বাজারে আসা ক্রেতা জলিল মিয়া বলেন, বিক্রেতারা ভোক্তাকে জিম্মি করে ফেলেছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায়। কিন্তু কমলে সেটা হয় না। তারা চিন্তা করে না, পণ্যটি আগে কম দামে কেনা। কিন্তু এগুলো দেখার কেউ নেই। সরকার দেখেও দেখে না। আমরা শুধু প্রতারিত হয়ে যাচ্ছি।
এদিকে বাজারে কমেনি মসুর ডাল ও আটা-ময়দার দাম। খুচরায় প্রতি কেজি মসুর ডাল এখনো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আটা ৭০ টাকা ও ময়দা ৭৫ টাকা।
পাইজাম চাল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা, আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, হাসকি প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে অস্বস্তি থাকলেও কিছুটা সুখবর আছে সবজি আর মাছের বাজারে। কারণ শীতের প্রচুর সবজি বাজারে, সরবরাহ বাড়ায় কমেছে টমেটো, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, নতুন আলু ও গাজরের দাম। বাজারে মাঝারি আকারের প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন আগেও সবজি দুটির দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে এখনো বেশ চড়া টমেটোর দর। পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
শিমের দাম তিন থেকে চার ভাগ কমেছে। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতে এর কেজি ছিল ১২০ টাকা। পেঁপের কেজি ২০ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৪০ টাকা, গোল বেগুন বা তাল বেগুনের কেজি ৬০ টাকা, নতুন আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। লাউয়ের পিস ৫০ টাকা, করলার কেজি মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩০ টাকা, দেশি গাজর কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুলের কেজি ৬০ টাকা, শালগমের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
এদিকে পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। নতুন পিয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। রকমভেদে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া ভালো মানের আদা ও রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে বেশকিছু চাষের মাছ ওঠায় দাম কমতে দেখা গেছে। চাষের কই, তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া রুই, কাতলা কার্প জাতীয় চাষের মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুব একটা হেরফের হয়নি দেশি জাতের মাছগুলোর দামে।
মাছ বিক্রেতা আব্দুল খালেক বলেন, সরবরাহের কারণে এখন মাছের দাম কম। সব ধরনের চাষের মাছের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে।
এ ছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া লেয়ার ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা ইয়াসিন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মো. শাহরিয়ার বলেন, বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কার্যকর হয়নি। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি করা হচ্ছে। দাম সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। তবে আগের কেনা তেল দোকানে থেকে যাওয়ায় তা কার্যকর হচ্ছে না। আমরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আগের কেনা রসিদ দেখছি। তারা সত্য না মিথ্যা বলছে, তা যাচাই করছি। কোনো অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনছি। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যেই দাম কার্যকর হবে।
সোর্স : মানব জমিন