সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৮৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। ব্যবসায়ীদের সাথে গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত ১৮ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো বাজারে মিলছে না কম মূল্যের তেল। কোম্পানিগুলো এখনো নতুন দামের তেল বাজারে ছাড়েনি। ফলে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে তেল। একইভাবে রান্নায় ব্যবহৃত আমদানিকরা মসলার দামও বেড়েই চলেছে। ডলারের দাম বাড়াকেই এর কারণ হিসেবে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৮৭ টাকা নির্ধারণ করার ঘোষণা এলেও দেশবাসীকে এখনো বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে রান্নার এই অপরিহার্য উপকরণটি। রাজধানীর বাসাবো মুদিদোকানি ইব্রাহিম বলেন, বর্তমানে যে সয়াবিন তেল রয়েছে, এগুলো সব আগের দামে কেনা। নতুন দামে এখনো তেল দোকানে আনা হয়নি। যে কারণে ১৮৭ টাকা দরে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে।
ক্রেতা হুমায়ুন কবির বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর ঘোষণার আগের দিন থেকেই সয়াবিনের দামে চলে নানা টালবাহানা। বাড়তে থাকে দাম। ক্ষেত্র বিশেষে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় তেল। কিন্তু দাম কমানোর ক্ষেত্রে থাকে নানা অজুহাত। ব্যবসায়ীদের অজুহাত বেশি দামে কেনার কারণে সরকারনির্ধারিত দামে তারা সয়াবিন তেল বিক্রি করতে পারছেন না। এবার সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমানোর ঘোষণায়ও বাজারে এর দাম কমেনি। ফলে কোনো উপায় না পেয়ে বাড়তি দামেই ক্রয় করতে হচ্ছে তেল।
রাজধানীর মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি জিরা ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, দুই মাস আগেও মানভেদে যা ছিল ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। জিরার সাথে গত দুই মাসে এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গসহ অন্যান্য মসলা কেজিতে ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং জাহাজভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে মসলার আমদানি খরচ বেড়েছে। এতে কয়েক মাস ধরে পাইকারি বাজারে বাড়তি দামে মসলা বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
জিরা, এলাচ, দারচিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ, আদা, হলুদ, রসুন, গুঁড়া মসলাসহ বাজারে বিক্রি হওয়া মসলাজাতীয় পণ্যের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। মূলত ভারত, চীন, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে মসলা আমদানি করা হয়। তবে ডলার সঙ্কটে কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এতে বেশ কিছু মসলার দাম বাড়তি।
টিসিবির তথ্যানুযায়ী, বাজারে এখন প্রতি কেজি জিরা ৫০০ থেকে ৫৭০ টাকা, দারচিনি ৪৩০ থেকে ৫২০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি এলাচ এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা, ধনে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা ও তেজপাতা ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি।
বাজারে নতুন চাল এলেও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পুরনো চাল। তবে নতুন চাল পুরনোর চেয়ে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় ব্রি-২৮ চাল কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫, নতুন ব্রি-২৮ চাল কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮০ ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। খোলা সুগন্ধি চাল দাম বেড়ে প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেট সুগন্ধি চাল ১৬০ টাকা। খোলা আটা কেজি ৬৫ টাকা ও প্যাকেট আটা ৭৫ টাকা। দেশী চিকন মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। মোটা মসুর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। খোলা চিনি এখনো সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৩ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রচুর পরিমাণে শীতের সবজির সরবরাহ রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। নতুন আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে, কচুর লতি ৪০ টাকা, করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার পিস ৩০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট পাতাকপির পিস ৩০ টাকা। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বরবটির কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বাজারে কাঁচামরিচের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
পাটশাকের জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কলমি শাক জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কচুর শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, মুলাশাক দুই আঁটি ২৫ টাকা, লাল শাকের জোড়া আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ২৫ টাকা, শাপলা ডাঁটা ১৫ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৬৮০-৭২০ টাকা এবং খাসির গোশত ৯০০-৯৫০ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা কেজিতে। পাকিস্তানি মুরগি ২৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৩০ টাকা, কক মুরগি ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা পিস।
একইভাবে বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ আকারভেদে বিক্রি করা হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়। পাঙ্গাশ মাছ প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, বড় রুইয়ের কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় কাতল মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, শিং মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ আকারভেদে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, কাঁচকি মাছ প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের কই মাছ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।