রাজনৈতিক প্রভাবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা এখন কোণঠাসা। রাষ্ট্রীয়ভাবে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তাদের প্রভাবেই মূলত পরিচালনা কমিটি গঠন কিংবা পরিচালিত হয়। বিগত কয়েক বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা একচ্ছত্র আধিপত্যের এমন নানা অভিযোগে অনেক কমিটি বাতিলও করা হয়েছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সম্পৃক্ত রয়েছেন এমন অনেক ব্যক্তিত্ব পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাবের নানা অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে সম্প্রতি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং/গভর্নিং কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, বেসরকারি স্কুল বা কলেজের ম্যানেজিং/গভর্নিং কমিটিতে পদ পেতে রাজনৈতিক প্রভাব এখন বড় বিষয়। বিশেষ করে সভাপতির পদটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য বরাদ্দই থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য সদস্য পদের জন্য দলের উচ্চপর্যায়ে থেকেও প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে জমি দাতা বা প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থের জোগানদাতা সদস্যরা এখন কোণঠাসা। তাদের মতামত কিংবা সামাজিক প্রভাবকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাবে খাটিয়ে শিক্ষক নির্যাতন কিংবা আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা বোর্ডে এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযোগও আসছে। ম্যানেজিং কমিটি গভর্নিং বডির সাথে মতপার্থক্যের কারণে মিরপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আদালত পর্যন্ত দৌড়াতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওই প্রধান শিক্ষককে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে যেতে হয়েছে।
ঢাকার বাইরে একটি জেলায় শত বছরের পুরনো একটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক কোটি টাকার জমি দাতাকে কেবল ভিন্ন মতের জন্য রাজনৈতিক কারণেই কমিটি থেকে গত এক যুগ ধরে বাইরে রাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা সদস্যদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি।
এসব বিষয় আমলে নিয়ে ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ নিতে চাইছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হবেন সরকারি উচ্চপর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হবেন অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা। আর স্কুলের সভাপতি হবেন সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণীর কোনো কর্মকর্তা। তবে এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির গঠনসংক্রান্ত প্রবিধানমালায় নতুন বেশ কিছু বিষয় সংযুক্ত করার বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ প্রবিধানমালায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের) ম্যানেজিং কমিটি গঠন বিষয়ে নতুন কিছু প্রস্তাবনা ও সুপারিশ প্রণয়নের বিষয়ে কাজ চলছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বুধবার উপসচিব মো: মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি পত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। সেই পত্রে বলা হয়েছে বর্তমানে স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে যে প্রবিধানমালা রয়েছে সেখানে নতুন করে কয়েকটি বিষয় সংযুক্ত করা যায় কি না সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডিতে সভাপতি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব বা সম-পদমর্যাদার (পঞ্চম গ্রেডভুক্ত) কোনো কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত কার যায় কি না সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। একই সাথে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে সভাপতি হিসেবে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেয়া যায় কি না সেই বিষয়ে মতামত দিতে আগামী এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।