রাত ১২টা। শীতের এই রাতে সবাই যখন ঘরে, রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে তখনো যানজট। চানখাঁর পুল থেকে সেই যানজটের বিস্তৃতি ফ্লাইওভারের অপরপ্রান্ত ধোলাইখাল ও কুতুবখালী পর্যন্ত। দুর্বিষহ এই পরিস্থিতি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার। যোগাযোগ সহজ করতে গিয়ে এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও তা যেন এখন মানুষের আরো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতে রাজধানীর কোথাও যানজট না থাকলেও হানিফ ফ্লাইওভারে ঠিকই যানজট থাকে।
ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ফ্লাইওভারে উঠতেও যানজট, নামতেও। ফ্লাইওভারের কুতুবখালী প্রান্তে দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যেসব লোকাল বাস আসছে ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে সেগুলো যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য দাঁড়াচ্ছে। এতে ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আবার পথচারীরা রাস্তা ক্রস করায় গাড়ির গতি কমাতে হচ্ছে। সে কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলে ফ্লাইওভারের কুতুবখালী প্রান্তে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে।
সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র গুলিস্তান ও চানখাঁরপুল নামতে গিয়ে। এমনও ঘটনা ঘটেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে এই দুই স্থান পার হতে। হাসান নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, তিনি প্রতিদিন রাজধানীর নারায়ণগঞ্জ থেকে গুলিস্তান আসেন। আর প্রতিদিনই যানজটে আটকরা পড়তে হয় জনপদ বরাবর। তিনি বলেন, গুলিস্তানে ফ্লাইওভারের টোল দেয়ার পর আর যাওয়ার স্থান থাকে না। সামনের রাস্তাগুলো গাড়িতে ঠাসা থাকে। যে কারণে ফ্লাইওভারের গাড়িগুলো যথাসময়ে ওই স্থান অতিক্রম করতে পারে না। আর এতেই ফ্লাইওভারে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একই কারণে চানখাঁর পুল দিয়ে যেসব যানবাহন নামার কথা সেগুলোও যানজটে আটকে যায়। কখনো কখনো এই যানজট ধোলাইখালের ব্রিজে ওঠার মুখ পার হয়ে পোস্তাগোলা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। যা এসব এলাকার মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সিদ্দিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে যে ওপরে নিচে এখন সমান যানজট। আর এই ফ্লাইওভারের নিচের অবস্থা খুবই নোংরা ও আতঙ্কের। অধিকাংশ এলাকায় ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার কোনো পরিস্থিতি নেই। কোনো কোনো স্থানে ফুটপাথই নেই। আবার কোনো কোনো স্থানে ফুটপাথ থাকলেও তা খুবই অপরিষ্কার। হায়াতুজ্জামান নামে এক পথচারী বলেন, ভোগান্তির আর শেষ নেই। বিশেষ করে রাতে যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্লাইওভারে গাড়ি আটকে থাকে তাতে মানুষ এখন এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
একাধিক গাড়িচালক বলেছেন, অব্যবস্থাপনার কারণেই এমনটি হচ্ছে। নামার মুখ যদি পরিষ্কার রাখা যায় তবে যানজট থাকবে না। বিশেষ করে গুলিস্তান ও চানখাঁর পুল এলাকার টোলঘরের সামনের রাস্তা পরিষ্কার থাকতে হবে। যাতে টোল দিয়ে গাড়ি দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়িচালক নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে পুলিশ চাইলে এই যানজট থাকবে না। পুলিশই এই যানজট লাগিয়ে রাখে। ফ্লাইওভার পার হওয়ার পর পুলিশ অনেক গাড়ি রাস্তার ওপর আটকে কাগজপত্র চেক করে। এতেই মূলত যানজট লেগে যায়। রাতে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয় যখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকগুলো ঢাকায় প্রবেশ করে। চেকের নামে এই গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখারও অভিযোগ রয়েছে। রাতে পোস্তগোলা, কাজলারপার, চানখাঁরপুল ও গুলিস্তান এলাকায় এই চেকিংয়ের মাত্রা বেড়ে যায় বলে অনেক ভুক্তভোগী গাড়িচালক অভিযোগ করেন।