হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজার নামাজ পড়াচ্ছেন বিএনপি নেতা আলী আজম। মঙ্গলবার ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের বিএনপি নেতা আলী আজমকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ও বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তাঁরা এ ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তিও দাবি করেছেন। কিন্তু জেল কোডের কথা বলে এ ঘটনায় দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে কারা কর্তৃপক্ষ। জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ জেল কোড অনুযায়ী আলী আজমকে ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে বলে দাবি করেন। তাঁর এ দাবি কতটা আইনসংগত, এখন সেই প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন
আলী আজম কি দুর্ধর্ষ অপরাধী নাকি পুলিশের জন্য ‘হুমকি’
জেল কোড অনুযায়ী, ‘কোনো বন্দীকে বেড়ি পরানো যাবে না, যদি না সে উগ্র, ভয়ংকর, পলায়নের চেষ্টাকারী বা পলায়নের প্রস্তুতি গ্রহণকারী না হয়। তবে কোনো বন্দী শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং কারাগারের বিধিবিধান লঙ্ঘন করলে শর্ত সাপেক্ষে বেড়ি পরানোর ক্ষমতা জেল সুপারের আছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি নেতা আলী আজম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন কিংবা উগ্র, ভয়ংকর, পলায়নের চেষ্টাকারী—এমন কোনো অভিযোগ জেল সুপার করেননি। তাহলে কোন যুক্তিতে মায়ের জানাজার সময় তাঁকে ডান্ডাবেড়ি পরানো হলো, সেটি বোধগম্য নয়।
আরও পড়ুন
হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজা পড়লেন বিএনপি নেতা
কারা আইন ১৮৯৪-এর ৫৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রয়োজন ব্যতীত বন্দীদের জেলার কর্তৃক লৌহশৃঙ্খলে আটক রাখা যাবে না।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইন জেলারকে এ ‘প্রয়োজন’ নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু এর পেছনে অবশ্যই যুক্তিসংগত কারণ থাকতে হবে। কেউ যদি কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ‘মর্জিমাফিক’ কাজ করে জেল কোডের দোহাই দেন, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন
‘এটা মধ্যযুগে ফেরার বীভৎস উদাহরণ’
যেকোনো আইনকানুন বা বিধিবিধানের ঊর্ধ্বে হলো সংবিধান। সংবিধানকে বলা হয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশে ৩৫ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলী আজমের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা স্পষ্টতই সংবিধানের লঙ্ঘন।
বাংলাদেশে প্রচলিত অনেক আইন, বিধিবিধান তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে। মানুষকে নিয়ন্ত্রণ, দমন-পীড়নই ছিল তখনকার শাসকদের উদ্দেশ্য। কিন্তু আধুনিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে এগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই অপব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি ঔপনিবেশিক আইনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
সোর্স : প্রথম আলো