গণতন্ত্র পূনঃপ্রতিষ্ঠা, ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়, আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জামায়াত আহুত যুগপৎ গণমিছিল কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে অসত্য, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সিন্ডিকেটেড সংবাদ প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ভবিষ্যতে এধরনের মিথ্যা ও সৃজিত সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম
এক বিবৃতিতে মহানগরী নেতৃদ্বয় বলেন, সরকার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। সে ষড়যন্ত্রকে পাকাপোক্ত করতেই জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে গণতন্ত্রকে রীতিমত নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দেশে আবারো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে রাজপথে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর জামায়াত সহ রাজপথের বিরোধী দলগুলো দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আওয়ামী-বাকশালী সরকারের পদত্যাগ, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের জন্য ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। ৩০ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিল কর্মসূচি পালনের জন্য সার্বিক সহযোগিতার জন্য ডিএমপি বরাবরে প্রথমে ই-মেইল এবং পরবর্তীতে জামায়াতের পক্ষ থেকে ৩ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল ডিএমপি অফিসে সরাসরি আবেদনপত্র দাখিল করেন।
তারা বলেন, সভা-সমাবেশ করা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭ ও ৩৮ এই নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। ডিএমপি বরাবর বিএনপি আবেদন করে গণমিছিলের অনুমতি লাভ করলেও ফ্যাসীবাদী সরকারের নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন জামায়াতের সাথে বিমতাসূলভ আচরণ করেছে। কারণ, আমাদের সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সরকারের নির্দেশে জামায়াতকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রীতিমত সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।
তারা আরো বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরী উত্তর সংবিধান কর্তৃক দেয়া অধিকার বলে রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচির সফল আয়োজন করে। মিছিলটি রামপুরা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৌচাকের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ গণমিছিলে বাধা দেয়। পুলিশ কয়েক দফা ব্যানার কেড়ে নিয়ে মিছিলকারীদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করলেও নেতৃবৃন্দের দায়িত্বশীল ও বিজ্ঞচিত তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। কিন্তু তারপরও একশ্রেণির পুলিশ সদস্য জনতার ওপর নির্বাচারে হামলা চালিয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। মূলত, পুলিশ বিনা উস্কানীতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা শুরু করেন। যা পুরো পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও ভাবমর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে আমরা মনে করি। পুলিশের উপর্যুরি লাঠিচার্জ ও হামলায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হোন। গ্রেফতার করা হয় শতাধিক নেতাকর্মীকে। আধুনিক প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সকলেই এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৭১ টিভি, দৈনিক জনকন্ঠ, মানবকন্ঠ, ভোরের কাগজ, বাংলা ট্রিবিউন, যায়যায়দিন, সমকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ঢাকা পোস্ট, জাগো নিউজ, ইনডিপেনডেন্ট২৪ডটকম সহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে জামায়াতের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জামায়াত একটি আদর্শবাদী, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও গণমূখী রাজনৈতিক সংগঠন। তাই জামায়াতের পক্ষে পুলিশের ওপর হামলা বা যেকোন বেআইনী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ অতীতে ছিল না, এখনো নেই; আগামী দিনেও থাকবে না-ইনশাআল্লাহ।
তারা বলেন, পুলিশ বিনা উস্কানীতে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল থেকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রামপুরা থানার ৩৫(১২)২২নং মামলায় ফজলু, শাহজাহান ও ইয়াহইয়া প্রত্যেকের ১ দিনের রিমান্ড, রমনা থানার ২৩(১২)২২ মামলায় কাউসারকে ২দিন, আজম, হুমায়ন ও সাইজুদ্দিন প্রত্যেককে ১ দিন, হাতিরঝিল ৫০(১২)২২ ইদ্রিস আলীসহ ৯জনের প্রত্যেককে ২ দিন, শাহজাহান ও ইয়াহইয়া প্রত্যেকে ১ দিনের, মিরপুর থানায় ২১(১২)২২ নং মামলায় রুকন উদ্দিন সহ ৩ জনকে, রূপনগর থানায় ৫(১২)২২ নং মামলায় গোলাম আজমকে এবং শাহজাহানপুর থানায় ২০(১২)২২ মামলায় নাজিবকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এদের প্রত্যেককেই স্ব স্ব থানায় নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি থানা এনে নির্যাতন করে বয়োবৃদ্ধ আব্দুস সোবহান ও কাউসারের হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। যা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মারাত্মক লঙ্ঘন। একশ্রেণির গণমাধ্যম সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করেছে। নেতৃদ্বয় পুলিশের অন্যায় গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও রিমান্ডের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান। একই সাথে অবিলম্বে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সকলের নিঃশর্ত মুৃক্তি দাবি করেন।
নেতৃদ্বয় চিহ্নিত ৭১ টিভি ও জনকন্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসত্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং এই প্রতিবাদ বিবৃতি স্ব স্ব মাধ্যমে প্রকাশ করে সাংবাদিকতার নীতিমালার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহবান জানান।