বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ বেড়েই চলেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে অন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে দরিদ্র দেশগুলোর মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬২ বিলিয়ন ডলারে! বৃহস্পতিবার এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়েছে, নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘রয়টার্স নেক্সট’ সম্মেলনে অংশ নিয়ে দরিদ্র দেশগুলোর এই দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার ফলে দরিদ্র দেশগুলো ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে। এই বিশাল ঋণের দুই-তৃতীয়াংশই দিয়েছিল চীন। ম্যালপাস বলেন, আমি খেলাপি ঋণের বিশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ ঋণ ব্যবস্থপনার ভালো কাঠামো দরিদ্র দেশগুলোর নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে ঋণের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন বিশ্বব্যাংকের প্রধান। কারণ এতে সেখানে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে উন্নত অর্থনীতির ঋণের খরচও বেড়ে যায় এবং অন্য দেশগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে হয়।
বিজ্ঞাপন
চীনে বৈঠক আগামী সপ্তাহে চীনে একটি বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন ম্যালপাস। সেখানে তিনি চীন কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। আলোচনায় দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ঋণ ছাড়, কোভিড-১৯ নীতি, আবাসনখাতে নৈরাজ্য এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয় উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংক প্রধান। তিনি আরও বলেন, চীন অন্যতম প্রধান ঋণদাতা দেশ। ফলে এ ব্যাপারে তাদের অংশগ্রহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব পরিস্থিতিকে তারা কীভাবে দেখছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর টেকসই সক্ষমতা অর্জনে কী করা দরকার তা নিয়ে কাজ করা জরুরি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাও বৈঠকে অংশ নেবেন, যেখানে ঋণ সমস্যা সমাধানে কী করা প্রয়োজন সে বিষয়েই জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া চীনের ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার কর্মকর্তারা এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতারা থাকবেন বৈঠকে। জর্জিয়েওভা আলাদা করে ‘রয়টার্স নেক্সট’কে জানিয়েছেন, ঋণ নিয়ে জি-২০ কমন ফ্রেমওয়ার্কে পরিবর্তন জরুরি। এছাড়া কোনো দেশ যদি সাহায্য চায় তাহলে তার ঋণ ফেরতকে সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রীলঙ্কার মতো মধ্য আয়ের দেশগুলোর জন্য এই সুবিধা দিতে হবে। আমরা উদ্বিগ্ন যে, বিশ্বজুড়ে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা ঋণ কার্যক্রমে আস্থা হ্রাস করবে। যদিও এখনও আমরা কোনো পদ্ধতিগত ঋণ সংকটের ঝুঁকি দেখছি না। তিনি আরও যুক্ত করেন, এখনও দেশগুলোর ঋণের ভার এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে তা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকিতে ফেলবে।
সোর্স : মানব জমিন