সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে গণমাধ্যমে অনিয়মের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আস্থাহীনতায় ভুগছে আমানতকারীরা। অনেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারও বিক্রি করছেন। তৎপরতা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতের অসুখ দিন দিন গভীর হচ্ছে। তাই চলমান অস্থিরতা দূর করতে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক থেকে ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ বের করে নেয়া ও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যখন ঋণ নিয়ে ফেরত না দিলেও কোনো শাস্তি হয় না, উল্টো বিভিন্ন ছাড় পায়-তখন খেলাপি বাড়বেই। কারণ খেলাপিরা দেখছে ঋণ শোধ না করলে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। তাই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সুবিধা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ ক্ষত বাড়তেই থাকবে।
এ ছাড়া অনিয়ম দুর্নীতির কারণে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। কিছু প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিজেরাই অনিয়ম করে অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
আমানতকারীদের জমানো টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ফলে গ্রাহকদের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের খারাপ অবস্থা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এ খাতের অসুখ দিন দিন গভীর হচ্ছে। এখানে সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কোনো সতর্কতা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত, যেসব প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে বা হয়েছে, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এখনই আইন অনুযায়ী দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে এ খাতে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করা জরুরি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ খাতে নজর কম। যে কারণে এখানে সুশাসন ও ব্যবস্থাপনায় প্রচুর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খেলাপি ঋণ নিয়ে সাবেক গভর্নর আরও বলেন, যে ব্যবসায় ঋণ দিয়েছে, তা যথাযথ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অর্থনীতি সংকটের সময় এমন বড় অনিয়ম হলে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগী হয়ে এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
উপরের নির্দেশের জন্য বসে থাকলে চলবে না। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশের কয়েকটি ব্যাংক একসময় খুব ভালো ব্যাংক ছিল। কিন্তু মালিকানা পরিবর্তনের পর তাদের অবস্থা দুর্বল হতে শুরু করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয় আগে থেকেই অনিয়মের বিভিন্ন ঘটনা জেনেছে। কিন্তু দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়া ব্যর্থতা। ফলে এসব অনিয়মের দায়ও এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, দেশের এক নম্বর রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংক আগে অন্য ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করতো। কিন্তু এখন নিজের গ্রাহকদের আমদানি দায় মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এক পরিবারকে বিশেষ সুবিধা দিতেই তাদের এ করুণ পরিণতি। তার মতে, ব্যাংক থেকে ঋণের নামে যেভাবে টাকা বের হয়ে গেছে, তার সঠিক তদন্ত হতে হবে এবং ফলাফল জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। এ দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। দ্রুত বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দেয়া উচিত। ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার উচ্চ পর্যায়ে যারা অনিয়মে সম্পৃক্ত, তাদের চাকরিচ্যুত করা উচিত। একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে হবে।
সোর্স : মানব জমিন