আর্ত-মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ এবং বিপন্ন মানুষের জীবন রক্ষায় সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর ‘পিওর ব্লাড ব্যাংক’এর প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহাগনগরী উত্তরের সেক্রেটারি, লক্ষ্মীপুর সদর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মদ রেউাউল করিম।
তিনি আজ লক্ষ্মীপুরে ‘মানবতার কল্যাণে বিশুদ্ধ রক্ত দান’ ¯স্লোগানকে সামনে রেখে পিওর ব্লাড ব্যাংক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। পিওর ব্লাড ব্যাংকের পরিচালক মু. আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সহকারি পরিচালক আরমান হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পিওর ব্লাড ব্যাংকের উপদেষ্টা মাওলানা নাসির উদ্দিন। উপস্থিতি ছিলেন সাইফুল্লাহ সাইফ, মুমিন উল্লাহ পাটওয়ারী ও জহিরুল ইসলাম আদনান প্রমূখ।
ড. রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রক্ত না পেয়ে মারা যান প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ। প্রয়োজনীয় রক্তের ৩৫-৪০ ভাগ পাওয়া যায় রোগীর নিকটজন থেকে, ১৫-২০ ভাগ স্বেচ্ছাসেবী থেকে ও ১৫-২০ ভাগ পেশাদার রক্ত বিক্রেতা থেকে। বাকি ২০-২৫ ভাগ বা প্রায় ২.৫ লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি থেকে যায়। অন্যদিকে পেশাদার বিক্রেতারা যে ১৫-২০ শতাংশ রক্তের যোগান দেন তা অনিরাপদ। ফলে ঘাটতি ও অনিরাপদ রক্তের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ বা প্রায় ৫ লাখ। এমতাবস্থায় আর্ত-পীড়িত মানুষের জীবন রক্ষায় পিওর ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি মানবতার কল্যাণে এই ব্যাংককে সফল ও স্বার্থক করে তোলার সমাজের সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষের সার্বিক সহযোগিতা আহবান জানান।
তিনি বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আর আর্ত-মানবতার কল্যাণই ইসলামী আদর্শের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জীবনাদর্শ, জীবন ব্যবস্থা ও জীবন বিধান হিসেবে ইসলামে রয়েছে সব সমস্যার ইনসাফপূর্ণ সমাধান। ইসলাম মানুষের চলার পথের সন্ধানদাতা, উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন এবং মানবজীবনের চরম লক্ষ্য হাসিলের একমাত্র পন্থা। এর ব্যাপ্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। মানবাধিকারের প্রাথমিক বিষয়গুলো হলো স্বাভাবিক জন্মের অধিকার; বেঁচে থাকার অধিকার বা স্বাভাবিক জীবনধারণের অধিকার; মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তুত ও বিষয় তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নিরাপদ জীবনযাপন ও উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের অধিকার; সম্মানজনক জীবন ও স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার। বস্তুত, ইসলাম মানব ও মানবতার জীবনবিধান। তাই বিশ্ব মানুষের মুক্তি ও মানবতার কল্যাণে আমাদেরকে ইসলামী আদর্শের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় রক্তদান হক্কুল ইবাদ হিসাবে গণ্য। কারণ, অসুস্থ্য মানুষের সেবা ও মানুষের জীবন রক্ষায় নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করাকে ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। এ বিষয়ে পবিত্র কালামে হাকীমের সূরা আল মায়েদাহর ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে কোনো একজন ব্যক্তির জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।’ হাদিসে রাসূল (সা.)এ বিষয়টি আল্লাহর সন্তষ্টি হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। বান্দা বলবে, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক- আমি কীভাবে আপনাকে দেখতে যেতে পারি ? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে সেখানে আমাকে পেতে…’ (সহিহ মুসলিম :২১৬২)। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত মানুষের কল্যাণে নিজের সামর্থ অনুযায়ি কাজ করা।
মহানগরী সেক্রেটারি বলেন, সরকার শুধু দেশে নয় বরং সারাবিশ্বেই ভোট চোর হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সম্প্রতি জাপানী রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিষয়টি আরও সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করার জন্য নানাবিধ ফন্দি-ফিকির শুরু করেছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সরকার নিজেদেরকে ভোট চুরির দায় থেকে মুক্ত করতে পারবে না। তিনি সরকারকে ছলচাতুরী ও ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান। অন্যথায় নিজেদের খোঁড়া গর্তেই তাদেরকে আত্মাহুতি দিতে হবে।
এছাড়াও তিনি লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে সিত্রাং-এ ক্ষতিগ্রস্ত ও আশ্রয়হারাদের মধ্যে ঢেউটিন বিতরণ করেন।