আশিকুল হামিদ
আমরা এমন এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছি, যখন করোনার কারণে শুধু নয়, ডেঙ্গু ধরনের আরো কিছু বিশেষ কারণেও একদিকে সকল ধরনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অন্যদিকে আসছে না বৈদেশিক বিনিয়োগ। তাছাড়া রফতানি আয়ে প্রকৃতপক্ষে ধস নেমেছে। দেশের অভ্যন্তরেও মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন চাকরি হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। অভাবের তাড়নায় ভদ্র ঘরের নারীরা পর্যন্ত ভিক্ষার জন্য রাস্তায় নেমে আসছেন। দেশজুড়ে প্রকৃতপক্ষে অঘোষিত দুর্ভিক্ষ চলছে।
এমন অবস্থায় একমাত্র ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে রেমিট্যান্স। গণমাধ্যমের রিপোর্টে জানা গেছে, করোনার কারণে সব দেশের অর্থনীতিই যখন বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে এবং বাংলাদেশেও যখন সংকটের সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করা হয়েছিল, তেমন এক সময়েও রেমিট্যান্স তথা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। গত বছর, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য-পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৪৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারÑ যদিও রিজার্ভকে যথাযথ পরিমাণে ধরে রাখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে বিরোধী দলগুলো।
ওদিকে রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ হিসেবে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে দুই শতাংশ হারে সরকারের দেয়া প্রণোদনা বা ইনসেন্টিভের কথা জানানো হয়েছিল। অর্থনীতিবিদসহ তথ্যাভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, দুই শতাংশ হারে প্রণোদনার ফলে প্রবাসীরা শুধু বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলেই অনেক বেশি পরিমাণে টাকা পাঠানো শুরু করেননি, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর ফলে হুন্ডি ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের পরিমাণও অনেক কমে গিয়েছিল। এভাবে সব মিলিয়েই লাভবান হয়েছে জাতীয় অর্থনীতি। এরই সুফল হিসেবে বেড়েছিল রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অন্যদিকে র্প্বূবর্তী অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ করোনার তীব্র সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও কমে যাওয়ার পরিবর্তে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৬৪৬ দশমিক ৬০ কোটি ডলার। এটা নিঃসন্দেহে দেশের এক বিরাট সাফল্য।
রেমিট্যান্স খাতে এমন অবস্থা কিন্তু কিছুদিন আগেও ছিল না। যেমন ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন, বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের তথা রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে গেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিভিন্ন সময়ে ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে কখনোই প্রণোদনা দেয়ার মতো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আর সে কারণেই একদিকে হুন্ডির অবৈধ ব্যবসা লাফিয়ে বেড়েছিল, অন্যদিকে কমেছিল রেমিট্যান্স আয়। সর্বশেষ পর্যায়ে সরকার অবশ্য দূরদর্শিতা দেখাতে পেরেছে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সরকারের পক্ষ থেকে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা বা ইনসেন্টিভ দেয়ার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তারই সুফল পাওয়া গেছে পরবর্তী সময়ে। একই কারণে করোনার সংকটের মধ্যেও রেমিট্যান্স শুধু বাড়েনি, রেকর্ডও তৈরি করেছিল। বস্তুত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে।
আশ্বস্ত ও নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো এ তথ্যটির পাশাপাশি অবশ্য বিপরীতধর্মী কিছু ভীতিকর তথ্য-পরিসংখ্যানও রয়েছে। যেমন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছিল, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সময়ে ৩৬ হাজার ২১০ জন বাংলাদেশিকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক নারী শ্রমিকও রয়েছেন। সৌদি আরব, ওমান, আরব আমিরাতের মতো কয়েকটি দেশ থেকে ফিরে আসা এসব শ্রমিকের অনেককেই বিভিন্ন অভিযোগে কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা ও জাপানসহ অন্য অনেক দেশ থেকেও চাকরি খুইয়ে ফিরেছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। ফলে কমে গেছে দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণও।
এমন অবস্থার বিপরীত খবরও অবশ্য জানা গিয়েছিল। যেমন, গত বছরের জুন মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, এতদিনের কর্মস্থলের পরিবর্তে বাংলাদেশিরা নতুন নতুন দেশে চাকরি জোগাড় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই চেষ্টায় তারা সফলও হচ্ছেন। এভাবে পোল্যান্ড, আলবেনিয়া, স্লোভেনিয়া এবং উজবেকিস্তানের মতো কয়েকটি দেশে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মাত্র পাঁচ মাসেই চাকরি যোগাড় করেছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৪০ জন বাংলাদেশি। উল্লেখ্য, করোনার কারণে বিশ্বের সব দেশে যখন গণহারে ছাঁটাই করা হচ্ছিল তেমন এক কঠিন সময়েও ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি নতুন দেশগুলোতে চাকরি যোগাড় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এভাবে চাকরি যোগাড়ের মাধ্যমেও দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যাদের প্রতি অঘোষিতভাবে উপেক্ষা-অবহেলা দেখানো হয়ে থাকে। একই কারণে একদিকে বিদেশে চাকরি পাওয়াদের সংখ্যা সব সময় সমান হারে বাড়ে না, অন্যদিকে পতন ঘটে রেমিট্যান্স আয়ে। এর ফলে অবস্থা বিপদজনক হয়ে পড়ে বিশেষ করে রফতানি আয়ও কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশের প্রবাসীরা অবশ্য সকল সংকটের সময়ই ইতিবাচক অবদান রেখেছেন। যেমন ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরে জানানো হয়েছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ছয় হাজার ১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে এর পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের আয় বেড়েছিল এক হাজার ৪৮ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু অক্টোবর মাসেই এসেছিল এক হাজার ৬৪২ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। এই টাকার তুলনায় পূর্ববর্তী বছর ২০১৮ সালের অক্টোবরে এসেছিল ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এ সময়ে চারশ’ মিলিয়ন ডলার বেশি রেমিট্যান্স আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। এই পরিমাণ তখন পর্যন্ত রিজার্ভের ক্ষেত্রেও ছিল দেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এ ধরনের তথ্যগুলোকে উৎসাহজনক মনে করার কারণ হলো, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্য প্রধান খাত পণ্য রফতানিতে দেশের আয় তখন কমে যাচ্ছিল অব্যাহতভাবে। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোÑ ইপিবি তার হালনাগাদ রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবর শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। নানা ধরনের প্রণোদনাসহ আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে আয় কমেছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। ইপিবি আরো জানিয়েছিল, অক্টোবর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ছিল এক হাজার ৪৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার সেখানে আয় হয়েছিল এক হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। অর্থাৎ ১৬০ কোটি ৬৮ লাখ ডলার কম। ইপিবির রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, একক মাস হিসেবে অক্টোবরে ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় শুধু অক্টোবর মাসেই আয় কমেছিল ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ। উল্লেখ্য, এর পূর্ববর্তী অর্থবছরের অক্টোবরে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৭১ কোটি ১১ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০১৯ সালের একই মাস অক্টোবরে দেশের রফতানি আয় হয়েছিল ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। অর্থাৎ ৬৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলার কম।
এটা শুধু এক বছরের পরিসংখ্যান নয়, প্রকৃতপক্ষে ওই বছরগুলোতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে ধারাবাহিকভাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনশক্তি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য-পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কমেছিল ১৪ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার পাঠালেও বছর হিসেবে ২০১৭ সালে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৩৫২ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। এই পরিমাণ অর্থ শুধু আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম নয়, পূর্ববর্তী ছয় বছরের মধ্যেও সর্বনি¤œ। এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর বছর হিসেবে ২০১২ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪১৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। একই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫২ কোটি ৬৮ লাখ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ সরকারের দাবি ও প্রচারণা অনুযায়ী যখন বাড়ার কথা তখন ২০১২ সালের তুলনায়ও কমেছিল ৬৪ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহের এই পতন কিন্তু হঠাৎ করে ঘটেনি। বাস্তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই রেমিট্যান্স কমেছিল ধারাবাহিকভাবে। অনেক বিলম্বে হলেও ২০১৬ সালে সরকারের টনক নড়ে এবং রেমিট্যান্স কেন কমে যাচ্ছে তার কারণ অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও তৎপর হয়। অনুসন্ধানকালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় টাকা পাঠানোকে একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। হুন্ডিকেও দায়ী করেছিল অনুসন্ধানকারীরা। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ২০১৮ সালে মোবাইলভিত্তিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর দু’ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে এক হাজার ৮৬৩ জন এজেন্টের হিসাবও বন্ধ করা হয়। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডি এবং বিকাশ-এর মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কারণেই রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে গেছে। তখন ধারণা করা হয়েছিল, বিশেষ করে বিকাশ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং রেমিট্যান্সের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।
অন্যদিকে পরিস্থিতিতে অত্যন্ত আশংকাজনক অবনতি ঘটেছিল বলেই মন্দাবস্থায় পড়েছিল রেমিট্যান্স খাত। মাত্র এক বছরের মধ্যেই রেমিট্যান্স কমেছিল ১৪ শতাংশ! আপত্তির কারণ হলো, এত কিছুর পরও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে উদ্বেগের কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। অর্থমন্ত্রী বরং তার ব্যাখ্যায় বোঝাতে চেয়েছিলেন, বিদেশেÑ বিশেষ করে সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের বেতন বা আয়ের পরিমাণ কমে গেছে বলেই নাকি রেমিট্যান্সও কমেছে! উল্লেখ্য,
অর্থমন্ত্রী কিন্তু এই সত্য স্বীকার করার ধারেকাছেও যাননি যে, সরকারের অভ্যন্তরীণ দমন-নির্যাতনের কারণে বিদেশে বাংলাদেশিদের চাকরি পাওয়াই সে সময় অনেক কমে গিয়েছিল। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে কোনো বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। এর ফলে রেমিট্যান্সে শুধু নয়, জনশক্তি রফতানিতেও মন্দাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, রেমিট্যান্সের এই পতন ছিল অত্যন্ত ভীতিকর। কারণ, রফতানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্ট কয়েক বছর ধরেই সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছিল। এমন অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় প্রধান খাত রেমিট্যান্সেও যখন ধস নামার খবর শুনতে হয় তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। কারণ, বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান আসে রফতানি আয় থেকে, এতদিন পর্যন্ত যার দ্বিতীয় প্রধান খাত ছিল রেমিট্যান্স। সে রেমিট্যান্সেই পতন শুরু হয়েছিল বলেই তখন বলা হয়েছিল, দেশের অর্থনীতি আসলে বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে পড়েছে।
মাত্র সেদিনের এই কঠিন অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছরের সফলতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সত্য আড়াল করার এবং কেবলই কল্পিত সাফল্যের কথা শোনানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত আর্থিক খাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া, বিশেষ করে জনশক্তি রফতানি এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোর ব্যাপারে তৎপর হয়ে ওঠা। এজন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। প্রবাসীদের স্বজনরা যাতে সহজে ও ঝামেলামুক্তভাবে তাদের নামে পাঠানো টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারে, সে ব্যাপারেও সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, ব্যাংকে গিয়ে ভোগান্তির কবলে পড়তে হয় বলেই প্রবাসীরা হুন্ডিসহ নানা অবৈধ পন্থায় টাকা পাঠিয়ে থাকেন। এটাও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। এ ব্যাপারে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে অবশ্যই সুফলদায়ক পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরা আশা করতে চান, প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা দেয়ার তথা উৎসাহিত করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবেÑ যাতে রেমিট্যান্স আয় ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একথা বুঝতে হবে যে, করোনার কারণে একদিকে সকল ধরনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অন্যদিকে আসছে না বৈদেশিক বিনিয়োগ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ও রফতানি আয়ে প্রকৃতপক্ষে ধস নেমেছে। এমন অবস্থায় একমাত্র রেমিট্যান্স ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে বলেই সর্বতোভাবে উৎসাহ যোগাতে হবে প্রবাসীদের প্রতি। না হলে জাতীয় অর্থনীতিও ভয়ংকর ধসের মুখে পড়বে।