ব্যাংক খাতের উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। কেননা আন্তর্জাতিকভাবে খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার প্রায় ৯ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকে এ হার ২০ শতাংশের বেশি। একইসঙ্গে সন্দেহজনক লেনদেন ও অর্থ পাচার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সুশাসন ঘাটতির কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বেনামি ঋণ। এটা নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করবে। সব মিলে ব্যাংক খাতে বিপদগ্রস্ত ঋণের অঙ্ক কত-তাও জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে আইএমএফ।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে এসব বিষয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি প্রতিকারে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে চলমান আলোচনার অংশ হিসাবে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসব বৈঠক করেন। আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দ।
একইদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে হয়েছে। এফআইডি’র সঙ্গে বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত ও আর্থিক খাত সংস্কার করতে বলছে। এনবিআর’র সঙ্গে বৈঠকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে এনবিআর কী ধরনের কর অব্যাহতি বা ছাড় দেয় এবং এসবের যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ।
এছাড়া আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কী ধরনের কর অব্যাহতি বা ছাড় দেয় এবং এসবের যৌক্তিকতা বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আর কর কাঠামো আধুনিকায়ন ও সংস্কার বিষয়ে এনবিআরের গৃহীত পদক্ষেপ এবং নতুন শুল্ক আইন বাস্তবায়নের বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। এনবিআর’র সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এসব বিষয়ে উঠে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক : বৈঠক সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ নিয়ে আইএমএফ উদ্বেগের কারণ হচ্ছে বিভিন্ন ছাড় এবং করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ৬ মাস আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলে ৬ মাসের ব্যবধানেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকায়।
আইএমএফ মনে করে, খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য উপস্থাপন হচ্ছে না। একদিকে নীতিমালার কারণে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ রয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাকে তারা আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছেন। তা না হলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য প্রকাশের কথাও তারা বলেছেন। তাদের মতে, খেলাপি ঋণের হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, খেলাপি ঋণের হিসাব দুভাবে করা হয়। একটি গ্রস এবং অপরটি নিট। গ্রস হিসাবে খেলাপি ঋণ বেশি হলেও নিট হিসাবে কম। এ হার ৩-৪ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। করোনার কারণে খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি ব্যাংকে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই। ফলে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে আইএমএফ’র সঙ্গে বাংলাদেশের এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি, র্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ও র্যাপিড ফাইন্যান্সিং ইনস্ট্রুমেন্ট চুক্তি আছে। নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে আইএমএফ মিশন এখন বাংলাদেশ সফর করছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হচ্ছে। সংস্থাটির সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে ২ সপ্তাহের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা এবং বাজেট সহায়তা হিসাবে আইএমএফ থেকে এই ঋণ নিতে চাইছে সরকার। এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) কর্মসূচির আওতায় দেড় বিলিয়ন করে এ ঋণ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী সরকার। এ ঋণের বিষয়ে আলোচনা করতে বুধবার ১৫ দিনের সফরে ঢাকায় আসে আইএমএফ’র একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিনিধি দলটির কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার ছাড়াও টাকা ও ডলারের বিনিময় হার, জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ, সঞ্চয়পত্র খাতে সংস্কার, বন্ড বাজারের উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়।
এর আগের বৈঠকে আইএমএফ মিশনের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা নিয়ে ৩০ মিনিটের একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়, যেখানে আইএমএফ’র ঋণের বিষয়টিও উঠে আসে। এ সময় রিজার্ভ সাশ্রয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপ এবং রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি পরিবর্তনের অগ্রগতি জানতে চায় প্রতিনিধি দলটি। একইসঙ্গে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ও খেলাপি ঋণ কমানোর পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ, বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, সঞ্চয়পত্র খাতের সংস্কার, ঋণের সুদের হারসহ মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আইএমএফ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার কয়েক দফা কমানোর পরও ঋণের সুদের সীমা দিয়ে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। তাই অর্থনীতির স্বার্থেই নীতি সুদহার তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এছাড়া বৈঠকে টানা ডলার বিক্রির কারণে অব্যাহতভাবে দেশের রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়েও সংস্থাটির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়েছে, এভাবে রিজার্ভ কমতে থাকলে তা দেশের অর্থনীতিকে বড় ধরনের চাপের মুখে ফেলতে পারে।
অপর এক বৈঠকে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ও বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া বহিঃখাতের ঋণপ্রবাহ এবং আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং রপ্তানি খাত ও বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ পরিস্থিতিও জানতে চাওয়া হয়। এ সময় আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়, তাদের ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে আগে থেকেই আপত্তি রয়েছে আইএমএফ’র। সংস্থাটির ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, কোনো দায় রিজার্ভ হিসাবে বিবেচিত হবে না। বিশেষ করে রিজার্ভের অর্থে গঠিত ইডিএফসহ বিভিন্ন ঋণ তহবিল, যেগুলো নন লিকুইড সম্পদ, সেটি রিজার্ভ থেকে বাদ দিয়ে হিসাব করার কথা বলে আসছে আইএমএফ। এভাবে হিসাব করলে বর্তমানে প্রকৃত রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ : ব্যাংকি খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি নিয়ে ফের আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের অঙ্ক কমিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। এছাড়া খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সঙ্গে আইএমএফ’র বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসছে। ওই বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত ও আর্থিক খাত সংস্কার করতে বলছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে এটি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণ প্রসঙ্গে তেমন আলোচনা হয়নি। সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে আর্থিক খাতের সংস্কার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পারফরম্যান্স ও খেলাপি ঋণ ইস্যু। বৈঠকে আলোচনার বিষয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। তবে ওই বৈঠক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিও অংশ নিয়েছেন।
বৈঠকে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দল বলেছে, সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও তা কমেনি। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। জবাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এই চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও খেলাপি ঋণের উচ্চহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেখানে বলা হয়, জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৫৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর মোট ঋণ হচ্ছে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৪ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়সহ অন্যান্য সূচকও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। এ সময় আইএমএফ’র পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ের অঙ্ক আরও বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে করোনার মধ্যে ব্যাংকের গ্রাহক ও ঋণখেলাপিদের দেওয়া বিশেষ সুবিধাগুলোর মাধ্যমে কতটুকু উপকৃত হয়েছে দেশের অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কি পরিমাণ ঋণ পেয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স এবং মূলধন সহায়তার পরিকল্পনা, খেলাপি ঋণ কমাতে স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ নিয়ে জানতে চায় আইএমএফ।
এনবিআর : রোববার এনবিআর’র সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ। প্রতিনিধি দলটি আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক নীতির সদস্যদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করে। বৈঠক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশের কর ব্যবস্থায় বিদ্যমান আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। তারা মনে করে, কর অব্যাহতি থাকায় শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা গড়ে উঠছে না। এছাড়া ভ্যাট অটোমেশন ও ই-ফাইলিং বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্য দেশের তুলনায় টোব্যাকো ট্যাক্স কম কিনা সে বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছে। জবাবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, যেসব শিল্প সক্ষমতা গড়ে উঠেছে সেসব শিল্পের অব্যাহতি সুবিধা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সর্বোপরি এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে নীতি প্রণয়ন কাজ করছে এনবিআর।
আয়কর আদায় কিভাবে বাড়ানো হবে আইএমএফ’র এমন প্রশ্নের জবাবে আয়কর অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কর জাল বাড়াতে ইতোমধ্যে জোন এক্সপানশনসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি অনেক সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে কর জাল বাড়ানোর কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই ফল পাওয়া যাচ্ছে। গত ৩ মাসে আয়কর আদায়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান তারা। আয়কর অব্যাহতি কমানোর বিষয়ে বলা হয়, প্রতি বাজেটে বিভিন্ন খাতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় কমানো হয়েছে। আর নতুন নতুন খাতকে করের আওতায় নিয়ে এসে আয়কর খাতে অব্যাহতি আরও কমানো হবে।
নতুন শুল্ক আইন ও শুল্ক কাঠামো সংস্কারের বিষয়ে শুল্ক অনুবিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়। এর জবাবে শুল্ক অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশীয় শিল্প বিকাশের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিল্প বিকাশের স্বার্থে বন্ডে ছাড় অব্যাহত রয়েছে। তবে বাস্তবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে ধীরে ধীরে এসব খাতে কর অব্যাহতি কমানো হচ্ছে। বিশেষ করে বন্ডের কিছু কিছু বিষয়ে নতুন করে করারোপ করা হচ্ছে। প্রতিবছর বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর কাস্টম আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে কাস্টম আইন প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এই আইনটি পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। কত সময়ের মধ্যে এই আইন পাশ হবে আইএমএফ’র এমন প্রশ্নের জবাবে এনবআির কর্মকর্তারা বলেন, জাতীয় সংসদে পাশ হলেই বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভ্যাট অটোমেশন, সংস্কার, কর জাল বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। অটোমেশনের আওতায় ই-ফাইলিং থেকে শুরু করে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার বিষয়েও জানতে চেয়েছেন আইএমএফ কর্মকর্তরা। জবাবে এনবিআর কর্মকর্তারা ভ্যাট অটোমেশনের বিষয়টি তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ই-ফাইলিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে এবং ইএফডির অগ্রগতিও তুলে ধরেন। আর ভ্যাট অব্যাহতি বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে নতুন নতুন কিছু পণ্যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনে নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। যেখানে আগে ভ্যাট ছিল না। আরও কিছু কিছু খাতকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভ্যাট অব্যাহতি কমানোর বিষয়ে এনবিআর জোর দিচ্ছে।