সাগরের পাড়ে ব্যাগগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, মানুষগুলো এখনো নিখোঁজ। ব্যাগের মধ্যে শার্ট, প্যান্ট, টুপি, কাঁথা, মোবাইল চার্জারসহ নিত্য ব্যবহারের অনেক জিনিস পড়ে আছে। এগুলো শুধু এখন কেবলই স্মৃতি।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সাগরে ডুবে যাওয়া ড্রেজার থেকে নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের ব্যবহৃত ব্যাগগুলো সাগর পাড়ে নিয়ে আসেন উদ্ধারকর্মীরা। ব্যাগগুলো দেখিয়ে নিখোঁজ আলম সরদারের ভাই সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এগুলো আমার ভাইদের ব্যাগ। ব্যাগে তাদের ব্যবহৃত জিনিসগুলো পড়ে আছে। চারজনের লাশ উদ্ধার হলেও এখনো আমার ভাইসহ চারজন নিখোঁজ রয়েছে। কতক্ষণে ভাইয়ের লাশ পাবো জানি না। এভাবে ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেল, এখনো চারটি লাশের হদিস পেলাম না।
এক ভাইয়ের লাশ নিয়ে আরেক ভাইয়ের লাশের অপেক্ষা : এ দিকে নিখোঁজ দুই ভাইয়ের জন্য সাগর পাড়ে প্রায় ৩৪ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন এনায়েত উল্লাহ নামের এক যুবক। গতকাল সকালে ছোট ভাই ইমাম হোসেন মোল্লার লাশ উদ্ধার হলেও এখনো নিখোঁজ বড় ভাই শাহিন হোসেন মোল্লা। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ভাইয়ের লাশ পাননি তিনি। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে বারবার ফোন দিচ্ছে, তাদের পেয়েছি কি না; কিন্তু বাড়িতে কোনো খবর দিতে পারছি না। ভাইদের শরীরের হাড় হলেও নিয়ে যেতে চাই। তাহলেও অন্তত মনকে বোঝাতে পারব।
স্ত্রীকে ঘরে তোলার আগে লাশ হলেন ইমাম : সাত মাস আগে পারিবারিকভাবে আকদ অনুষ্ঠান হয় ইমাম হোসেন মোল্লার সাথে একই এলাকার তানিয়ার সাথে। আকদ অনুষ্ঠানের সাত মাস পর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে মারা গেলেন পটুয়াখালী সদরের জৈনকাঠি এলাকার আনিচ মোল্লার ছেলে ইমাম হোসেন মোল্লা (২৮)।
জানা গেছে, সাত মাস আগে ইমামের সাথে একই এলাকার তানিয়ার সাথে পারিবারিকভাবে আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। আগামী জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির দিকে অনুষ্ঠান করে বউ ঘরে তোলার কথা ছিল; কিন্তু তার আগে ইমাম পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন।
ইমামের ফুফাতো ভাই আলী আহম্মদ বলেন, আগামী জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে ছোট ভাইয়ের বউকে অনুষ্ঠান করে ঘরে তুলে আনার কথা ছিল। কোথায় বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, এখন ভাইয়ের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে যাবে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান বলেন, নিখোঁজ আট শ্রমিকের মধ্যে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি চারজনকে উদ্ধারে একটা ভলগেট ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দিয়েছি, সেখান থেকে একটি এক্সপার্ট টিম আসবে। তারা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ধরন দেখে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী উদ্ধারকাজ শুরু হবে।
গত সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে ৫০০ ফুট গভীরে সাগরের মাঝে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন রাখা ছিল। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাতে ঝড়ে কবলে পড়ে সেখান থেকে আট শ্রমিক নিখোঁজ হন। এখন পর্যন্ত আনিস মোল্লার ছেলে ইমাম মোল্লা, আব্দুল হক মোল্লার ছেলে মাহমুদ মোল্লা, সেকান্দার বারির ছেলে মো: জাহিদ বারি ও রহমান ফকিরের ছেলে মো: আল-আমিন ফকিরের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আনিস মোল্লার বড় ছেলে শাহিন মোল্লা, নুরু সরদারের ছেলে আলম সরদার ও রহমান খানের ছেলে তারেক মোল্লাসহ চারজন।