স্টাফ রিপোর্টার: নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাকাল নিম্ন আয়ের মানুষ।টিসিবির ট্রাকের দীর্ঘ লাইন দেখলে তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা না। ওএমএস আর টিসিবির ট্রাক সেল কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক কেজি চিনির জন্য তিন ঘন্টা লাইনে দাঁড়াচ্ছে ক্রেতা। ন্যায্য মূল্যে পণ্য পেতে মানুষের হয়রানি কমছে না। অনেক সময় পণ্য না পেয়ে খালি হাতে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।
টিসিবির ট্রাকে তেল, চিনি,ডাল এবং পেঁয়াজ দিয়ে থাকেন। যখন যে পণ্যটির দাম বেশি বেড়ে থাকে তখন সে পণ্যটির চাহিদা বেড়ে থাকে। এর আগে তেলের চাহিদা বেশি ছিল। এখনও আছে। কিন্তু তার সাথে যুক্ত হয়েছে চিনি। গত বছর পেঁয়াজের চাহিদা বেশি ছিল কিন্তু এবছর পেঁয়াজের চাহিদা নেই। গত বছর চিনির তেমন চাহিদা ছিলনা। এখন এক কেজি চিনির জন্য দীর্ঘ তিন চার ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের দাম একের পর এক বাড়ছেই। একবার তেল একবার চিনি আরেকবার পেঁয়াজ কখনো চাল। বাজারের এমন অবস্থা নাকাল সাধারণ মানুষ। সরকার দৃশ্যত বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তাতে তেমন ফল পায়নি সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে শাপলাচত্বর সংলগ্ন টিসিবির গাড়ির সামনে চিনি কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ফজল মাহমুদ। একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত তিনি। ফজল মাহমুদ বলেন, বাজারে প্যাকেটজাত চিনি এখন খুলে বিক্রি করছে ১১০ টাকায়। এখানে অর্ধেক দামে পাওয়া যাচ্ছে। টাকা বাঁচাতে আমি এখানে দাঁড়িয়েছি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় চিনি কিনতে ভোক্তাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। লাইন দীর্ঘ হলেও সবাই চিনি পাচ্ছেন। এতে স্বস্তির ছাপ দেখা গেছে ক্রেতার মধ্যে।
চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় সোমবার থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল ১১টি স্থানে ভর্তুকি মূল্যে চিনি বিক্রি শুরু করেছে সরকারি বিপণন সংস্থা (টিসিবি)। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীর পাশাপাশি যে কেউ ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ এক কেজি চিনি কিনতে পারছেন। বিক্রেতারা বলছেন, চিনি থাকা সাপেক্ষ বিক্রি চলছে। সর্বোচ্চ এক কেজি কিনতে পারছেন একজন ক্রেতা। এজন্য কোনো কার্ড দেখানোর প্রয়োজন হচ্ছে না।
হাসান নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমার ছোট ভাই চিনি বিক্রি করে। লাইনে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। যতোটুকু চিনি পাবো তাতেই লাভ হবে। দোকানের কাজে আসবে, ব্যবসায় লাভ বেশি হবে।
মিতুল নামে তৃতীয় লিঙ্গের একজন দাঁড়িয়েছেন লাইনে। তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) সব দোকান বন্ধ ছিল, যারা খুলেছিলেন চিনির দাম ১২০ টাকা চেয়েছিল। আমি এখানে কম দামে চিনি দেখে কিনতে দাঁড়িয়েছি। চিনি যেহেতু লাগবে কম দামে পেলে সেটাই নেবো।
টিসিবির একজন ক্রেতা এক কেজি চিনি কিনতে পারছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে সেখানে চিনি তেল কিনতে কয়েকশো মানুষের দীর্ঘ সারি। এক কেজি চিনির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে তারা। কারণ বাজারের চেয়ে অর্ধেক দামে চিনি মিলছে টিসিবির ট্রাকে।
চিনি পেতে লাইনে দাঁড়ানো আব্দুস সালাম বলেন, দোকানে এক কেজি চিনি ১১০ টাকা। এখানে ৫৫ টাকা কম। সেজন্য কষ্ট হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সময় কিছুটা বেশি লাগলেও কিছু করার নেই। কষ্ট মেনে নিতে হবে। ৫৫ টাকা সাশ্রয় করতে পারলে বর্তমানে সেটাই আমার জন্য অনেক বড় কিছু।
তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা করেও টিসিবির কার্ড (ফ্যামিলি কার্ড) পাইনি। এখানে কার্ড ছাড়া দিচ্ছে শুনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু শুধু চিনি নয়, এর সঙ্গে যদি তেল দিতো তাহলে খুব ভালো হতো।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের কাছে ভর্তুকি মূল্যে চিনি বিক্রি শুরু করছে সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি। সোমবার থেকে টিসিবির চিনি কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এজন্য টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড প্রয়োজন হচ্ছে না।
টিসিবি চিনি বিক্রি শুরুর দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার রামপুরা, মালিবাগ রেলগেট ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মালিবাগ রেলগেট এলাকায় চিনি কিনতে আসা মর্জিনা বেগম বলেন, তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চিনি পেয়েছি। সকাল থেকে বিরাট লাইন। তারপরও মানুষ নিচ্ছে। লাইনে অনেক চা দোকানি রয়েছে। কেউ কেউ একাধিকবার লাইনে দাঁড়াচ্ছে। সেজন্য চাপ খুব বেশি।
টিসিবির ডিলাররা জানান, দিনে তাদের দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৭০০ কেজি চিনি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৭০০ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে চিনি কিনতে পারছে।
এদিকে, টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাজধানীর ১১ স্পটে চিনি বিক্রি কার্যক্রম চলছে। ভোক্তাপর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে এ চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি বাজার। চিনির দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ পেলেই অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। করা হচ্ছে জরিমানাও।
অন্যদিকে সোমবার একদিনের মধ্যে চিনির বাজার স্থিতিশীল হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেননি চিনি সরবরাহকারীরা। ভোক্তা অধিকারে মতবিনিময় সভায় তারা এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তবে মঙ্গলবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো অধিকাংশ দোকানে খোলা চিনি নেই। যেখানে মিলেছে সেখানে প্রতি কেজি ১১০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাকে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার গ্যাসে রেশনিং করার কারণে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ কমায় চিনির উৎপাদনে ধস নেমেছে। আবার নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার টিসিবির জন্য চিনি সংগ্রহ করছে স্থানীয় বাজার থেকে। এতে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডলার সংকটে আমদানি কম হওয়াকেও দায়ী করছেন উৎপাদনকারীরা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত বছরের তুলনায় এ বছর চিনি সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। শিগগির আরও এক লাখ টন চিনি আমদানি করা হবে। দ্রুতই চিনির বাজার স্থিতিশীল হবে।