রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় হানিফ উড়ালসেতুর নিচে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশের প্রায় আধাকিলোমিটার সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্যস্ত এই সড়কের এ অংশের পিচ-খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। এসব খানাখন্দে জমে আছে পানি। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে ওই সড়কে চলাচলকারীসহ এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভাঙাচোরা এই সড়কে চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে সেখানকার উড়ালসেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত এই দুরবস্থা। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে সেখানে ঘুরে ওই সড়কে চলাচলকারীদের এই দুর্ভোগ দেখা গেছে।
দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অন্তত ২০০ গজ রাস্তা ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। সেখানে তৈরি হয়েছে বেশ কটি বড় গর্ত। সেগুলো দেড় ফুটের বেশি গভীর। চলাচল করতে গিয়ে অনেক রিকশাচালক বাধ্য হয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসছেন। আবার অনেক যানবাহন ব্যবহার করছে অন্য পাশের উল্টো লেন। কোনো চালক ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে আটকা পড়ছেন গর্তে। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা যানবাহনের চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও সংস্কারের অভাবে সেখানে খানাখন্দ তৈরি হয়ে এই বেহলা দশা সৃষ্টি হয়েছে।
সেবা পরিবহনের বাসচালক রতন মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে প্রায় আধাকিলোমিটার রাস্তায় খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। অনেক সময় এত ঝাঁকুনি লাগে, যাত্রীরা গালাগাল করে। কিন্তু এ পরিস্থিতির জন্য তো আমরা দায়ী না। এই যে বড় বড় গর্ত দেখছেন, অনেক সময় সেখানে আটকা পড়ছে যানবাহন, ঘটছে দুর্ঘটনা। ’
অনন্যা পরিহনের যাত্রাবাড়ীর কাউন্টার মাস্টার নাদিম মিয়া বলেন, ‘গত তিন মাস ধইরা কাউন্টারের সামনের রাস্তা এতটাই খারাপ, গাড়িই আইতে পারে না! গাড়ি আইলেও মাঝে মাঝে সামনের গ্লাস ভাইঙ্গা পইড়া যায়। ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা গালাগাল দেয়। তাই উল্টা রাস্তা দিয়া গাড়ি আইলে যাত্রীরা হাঁইটা গিয়া উঠে। রাস্তা খারাপ থাকায় অনেকে পরিবার নিয়া আইতে পারে না। আর বৃষ্টি হইলে তো চলাচলই করা যায় না। এই জন্য আমাদের যাত্রী কইমা গেছে। ’
ওই এলাকার রিকশাচালক হাসান নূর বলেন, ‘কী আর কমু। ঢাহার মেইন জায়গায় যদি এমুন অয়…! এক বছর ধইরা এ অবস্থা। মাঝে মাঝে সুরকি দেয়। বৃষ্টি হইলে আর বড় গাড়ি চললে এগুলা সইরা গিয়া ডোবা হইয়া যায়। এহানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট রিকশাওলাগো। হপ্তাখানেক আগে গর্তে পইরা আমার রিকশার চাকা বেকা হইয়া গেছে, শিকও ছিঁড়ে গেছে কয়ডা। ’
ওই সড়কে মাছের আড়তের সামনের চায়ের দোকানি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘দুই দিন আগে এইখানে একটা ট্রাক উল্টাইয়া গেছে। রক্ষা হইছে, তখন পাশে কোনো রিকশা বা অন্য কিছু ছিল না। থাকলে মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, রাস্তাটা ঠিক কইরা দিক। ’
ভ্যানচালক আনোয়ার বলেন, ‘এখানের এক রডের দোকানের নিয়মিত ভাড়া টানি। তাই বাধ্য হইয়াই ঝুঁকি নিয়া ভাঙ্গা রাস্তা দিয়া যাতায়াত করি। ’
পিকআপচালক রুবেল ও সুফিয়ান বলেন, ‘বছর ধইরা এই অবস্থা। এখন সবচাইতে করুণ। এগুলো দেখার কেউ নাই। প্রশাসনের লোকেরাও দেখে না। ’
সেখানকার ভুক্তভোগী যানচালকদের দাবি, সড়কটি যেন দ্রুত মেরামত করে সেখানে উঁচু করে স্থায়ীভাবে পিচঢালাই দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভালো করা হয়।
স্থানীয় ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা বলেন, ‘সড়কের এই বেহালে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সড়কটি সংস্কারের জন্য শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সার্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত সড়কটি মেরামত করা হবে। ডিসেম্বরের আগেই কাজ শুরু করতে পারব।