স্টাফ রিপোর্টার: কমছে না নিত্যদিনের জিনিসপত্রের দাম। একের পর এক জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিত্যপণ্যের বাজারে এখনো অসহনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারে শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে। কিন্তু দাম এখনো অনেক চড়া। এদিকে মাছ, চিনি ও চালের দামেও স্বস্তি নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে শীতকালীন সবজির মাঠ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ কারণে শীতের সবজির দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে চিচিঙ্গা, বেগুন, পটল, ঢ্যাঁড়স ও কাঁকরোলসহ সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে অন্তত ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক কৃষকের সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। এ কারণে দামও চড়া। এছাড়া চলতি সপ্তাহ থেকে বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসীয়ারা। তবে এখনো নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশিতে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০-১২০ টাকা দামে।
গতকাল সবজি বাজারে দেখা গেছে, প্রতিকেজি পেঁপে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ২০-২৫ টাকা। এছাড়া পটল ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০-৮০ টাকা, গোল বেগুন ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, শিম ১০০-১২০ টাকা, টমেটো ও গাজর ১৪০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, করলা ৬০-৬৫ টাকা, ফুলকপি প্রতি জোড়া ১৩০ টাকা, বাঁধা কপি ৬০ টাকা, লাউ ৪০-৭০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, মানভেদে কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও চিচিঙ্গা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, রসুন ১২০-১৩০ টাকা ও আদা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা, আটাশ ৫৫ থেকে ৫৮, নাজিরশাইল ৮৩ থেকে ৯১, মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫৫, চিকন চাল ৭০ থেকে ৮০, কাটারি ৬০ থেকে ৬৫, আটাশ ৪৮ থেকে ৫৫ এবং পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। নতুন করে বেড়েছে আটার দামও। প্যাকেট আটা গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেছেন ৫৮ টাকা কেজি দরে। এই সপ্তাহে সেই একই আটা বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া আটা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ প্রতিকেজিতে বেড়েছে তিন টাকার মতো।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ময়দা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজি দরে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে এই ময়দার দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে বড় দানা মসুর ডালের (তুরস্ক ও কানাডা) দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মাঝারি ধরনের মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এদিকে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪৫-১৫০ টাকা, হাসের ডিম ২১০ আর দেশি মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০, পাকিস্তানী কক ৩২০ টাকা, দেশী মুরগি ৫৩০-৫৫০ টাকায়, দেশী হাঁস ৪২০-৪৫০ কেজি আর কবুতর প্রতি জোড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। অন্যদিকে গরু ও খাসির গোশতের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। বাজারে গরুর গোশত ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা আর খাসির গোশতের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজারে পৌঁছায়নি সরকার নির্ধারিত দামের চিনি। যদিও গত সোমবার ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার থেকে সরকার নির্ধারিত দাম, অর্থাৎ প্রতিকেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি করা হবে। বাজারে চিনির সংকট থাকবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারা। তবে এরপর পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এদিকে আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। প্রতিকেজি রুই ২৬০-২৭০ টাকা, কাঁচকি ৭০০, পাবদা ৬০০, রূপচাঁদা ১ হাজার ১০০ এবং তেলাপিয়া ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।