স্যুটকোট পরিহিত ব্যক্তিরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) জালিয়াতি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন বক্তা। তারা বলেন, ইভিএমের কারিগরি দুর্বলতা রয়েছে। এ মেশিনে ফলাফল জালিয়াতি করা যায়। শনিবার রাতে ‘ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ‘ইভিএম এ সমস্যা কোথায়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন।
সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও সিনিয়র আইটি স্পেশালিস্ট সাইফুর রহমান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভোডাফোনের সিনিয়র সল্যুশন আর্কিটেক্ট ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ব্যালট ও ইভিএম যেটাই হোক না কেন মানুষকে যেন ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা না হয়। আমার আশঙ্কা ইভিএম মেশিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে। তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেন, গত নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে গড়ে ৩০ শতাংশ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এ মেশিনে ভোট কম পড়ার পরও সেটা কেন ব্যবহার করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে স্যুটকোট পরা ব্যক্তিরা জালিয়াতি করতে পারেন; যেটা কাক-পক্ষি দেখতে পারবে না।। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেটা দেখা গেছে। ওই নির্বাচনে দুইবার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের ১ শতাংশ ওভাররাইটিং করার ক্ষমতা দেওয়া হলে তা কে দেখবে। এক শতাংশের জায়গায় ১০ শতাংশ ওভাররাইটিং করার ক্ষমতা দেওয়া হলে কে সেটা পরীক্ষা করে দেখবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ ইভিএম থেকে সরে গেছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা কেন ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের দিকে যাচ্ছি? কেন আমরা তিনশ’ আসনে ইভিএম ব্যবহার করছি না। এখানে কি ১৫০ আসনে জয় আগেই নিশ্চিত করতে এ মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে- প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রযুক্তিবিদ সাইফুর রহমান বলেন, সোর্সকোড ছাড়া ইভিএম সঠিকভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। দেশে যত সংখ্যক ইভিএম রয়েছে, সেগুলোর পরীক্ষা করার মতো ওই সংখ্যক কারিগরি ব্যক্তি নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে ইভিএম পরীক্ষা করে রেখে দিলেও মানুষের মধ্যে সন্দেহ থেকে যাবে। সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মে মনে হচ্ছে তারা মিশন নিয়ে এসেছেন।
মূল প্রবন্ধে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইভিএমে ইন্টিগ্রেটেড রেজাল্ট তৈরির সুযোগ নেই। ভোটদান ডিজিটাল ও ফলাফল ম্যানুয়েল কেন? স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ভোট শুরুর আগে দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও অডিট কার্ডে আগ থেকে কোনো কেন্দ্রের ফলাফল রেকর্ড আছে কিনা-তা চেক করার ব্যবস্থা নেই। প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএম প্রস্তুত করা হয়। প্রোগ্রামিংয়ে জালিয়াতি করা গেলে ফলাফলেও জালিয়াতি করা যায়। ইভিএমে ভোটার ভেরিফাইড ট্রেইল নেই। ইভিএম ঘনঘন হ্যাং করে। কায়িক শ্রম ও বৃদ্ধ মানুষের আঙ্গুলের ছাপ পড়তে পারে না ইভিএম। এ কারণে কর্মকর্তাদের ইভিএম ওভাররাইটিং করার সুযোগ দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাব আছে। তিনি বলেন, নড়াইলের একটি নির্বাচনের ইভিএম ফলাফলের প্রিন্ট কপিতে দেখা যায়, ওই প্রিন্টটি আগের রাতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব কার্ড থেকে ফলাফল প্রিন্ট দেওয়া হয়, সেখানে আগের কোনো রেকর্ডেড তথ্য থাকলেও সেটাই প্রিন্ট হবে। অডিট কার্ড ডিজিটাল ফরেনসিকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ নেই।