ইবনে নূরুল হুদা
দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিচ্যুতির কারণেই সুশাসন ব্যাহত হচ্ছে। রাজনীতিতে আমলাতন্ত্রের অযাচিত প্রভাব-প্রতিপত্তি নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। স্বাভাবিক কারণেই ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করেছেন একশ্রেণির অসাধু আমলা। যার প্রমাণ মিলছে মাঠ প্রশাসনের দিকে তাকালে। সম্প্রতি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুবা ইসলাম ফুটবল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার ট্রফি ভেঙে ফেলে তীব্রসমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। যে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বগুড়ায় ইউএনও সমর পালের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আলমগীর হোসেনকে মারধর এমনকি হাত-পা ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা, কক্সবাজারের টেকনাফ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও নওগাঁর বদলগাছীসহ আরও কয়েকটি স্থানে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এ ধরনের আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। যা সরকারকেও অনেকটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
আসলে আমাদের দেশে সরকার ও নির্বাহী বিভাগ বা আমলাতন্ত্রের মধ্যে সেতুবন্ধন না থাকায় দেশে সুশাসন ব্যাহত হচ্ছে। অধিকারের পরিবর্তে অনধিকারই জোরালো ভিত্তি পেয়েছে। যা কাক্সিক্ষত না হলেও এটাই এখন বাস্তবতা। শাহজাহান নাটকে নাট্যকার দিজেন্দ্রলাল রায় ‘দিলদার’ চরিত্রের মাধ্যমে একটি পরিহাসের অবতারণা করেছিলেন। নাটকের এক সংলাপে শাহজাদা সুজার বিদুষক ‘দিলদার’ জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, ‘কুকুর; না লেজের শক্তি বেশী? দিলদারের সপ্রতিভ জবাব, কুকুরের। কারণ, কুকুর লেজ নাড়ে। এর বিপরীত হলে তো লেজই কুকুর নাড়তো’। বিষয়টি হাস্য-রসাত্মক হলেও খানিকটা কৌতুহলোদ্দীপকও। কারণ, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সে স্বাভাবিকতা আর নেই। কারণ, কোন কিছুই এখন স্বাভাবিক গতিতে চলছে না। মহাজন ফরিয়ার পর্যায়ে নেমে এসেছেন; আর ফরিয়ারাই এখন রীতিমত মহাজন। রাখাল মনিব প্রসব করতে শুরু করেছে। রাষ্ট্র গণপ্রজাতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে আমলাতান্ত্রিক গণতন্ত্রের পথেই যাত্রা শুরু করেছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষমতা কখনো অবারিত হয় না বরং তা আইন ও সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমলাদের অবারিত ক্ষমতাচর্চার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আইন-কানুন, বিধি-বিধান ও চাকরিবিধির কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না একশ্রেণির অতিউচ্চাভিলাষী আমলা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখন বাঁশের কঞ্চিই বেশি পরিপুষ্ট। এমতাবস্থায় আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্যে রাজনীতিকরা অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে খোদ রাজনীতিকরা আত্মস্বীকৃতি দিতে শুরু করেছেন। আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হলেও রাজনীতিকদের পৌনঃপুনিক ব্যর্থতার কারণেই তারাই এখন দ-মু-ের কর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। অথচ সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ’’Every person in the service of the republic has a duty to strive at all time to serve the people.’’ অর্থাৎ ‘সব সময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’।
একশ্রেণির অসাধু আমলা এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করেছেন। কিন্তু এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য কারা দায়ী তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ বিষয়ে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিচ্যুতি, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি ও রাজনীতিকদের পর্বত প্রমাণ ব্যর্থতাকে জোরালোভাবে দায়ী করা হচ্ছে। আর এই বিষয়টিই অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করা হচ্ছে। কারণ, রাজনীতিকদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে আমাদের দেশের রাজনীতির কক্ষচ্যুতি ঘটেছে। আর অরাজক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পুরোপুরি সুযোগ গ্রহণ করছেন সুবিধাভোগীরা।
বিষয়টি অভিনব না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অভিযোগের মাত্রা আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। মেঠো বিরোধী দলগুলো বিষয়টি বেশ আগে থেকে সোচ্চার হলেও এখন জাতীয় সংসদে ‘চ্যারিটি ম্যাচ খেলা’ বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতার মুখেও এমন অভিযোগের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের জিএম কাদের অনেকটা খেদোক্তি করেই বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক হচ্ছেন জনগণ। আর তাদের ভোটে নির্বাচিতদেরই দেশ পরিচালনার কথা। কিন্তু কাজকর্মে এমপি সাহেবদের খবর নেই, আর সচিব-সাহেবরা সব কাজ করেন, মন্ত্রী মহোদয়েরা শুধু জানতে চান’। বিষয়টি জাতীয় পার্টি নেতার বিলম্বিত উপলদ্ধি হলেও সত্য ভাষণের জন্য তিনি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
জিএম কাদের যে পরিস্থিতির কথা বলেছেন তাতে দেশের বাস্তব চিত্রই ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তারা এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্রের জন্য আরো দুঃখজনক পরিণতির আশঙ্কা করছেন। আমলারা যে জোর করে রাজনীতিতে আসছেন একথাও ঠিক নয়। রাজনীতিবিদদের উপর্যুপরি ব্যর্থতার ছিদ্রপথেই সুযোগ নিচ্ছেন তারা। আর রাজনীতিকরা ক্ষমতার খুঁটি ঠিক রাখার জন্য এসব আমলাদের বরাবরই তোষণ করে চলেছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যদি আমলাতন্ত্রনির্ভর হতে হয় তাহলে আমলারা সুযোগ নেবেন এটাই স্বাভাবিক।
একশ্রেণির আমলার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ এজন্য কম দায়ী নয়। কারণ, এখন প্রশাসনের সচিব বা পদস্থ কর্মকর্তারা অবসরের পরই রাজনীতিতে যোগ দিয়ে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার খোয়াব দেখেন। এজন্য তারা গ্রাউন্ড প্রস্তুত করেন সরকারি চাকরিতে থাকার সময়ই। সরকারি চাকরিতে থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। যা চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লংঘন।
আমলারাও এই অযাচিত ক্ষমতা পেয়ে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নানাবিধ অপরাধপ্রবণতায়ও জড়িয়ে পড়ছেন। জনপ্রশাসন সচিব ঢাকায় প্রশাসনের কমর্র্কতাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘কর্মকর্তাদের অপরাধপ্রবণতা এত পরিমাণে এখন বেশি যে প্রতিদিন তিন-চারটি করে বিভাগীয় মোকদ্দমা শুনতে হয় এবং বিভাগীয় মোকদ্দমায় অনেকের শাস্তি হচ্ছে। এটা জনপ্রশাসনের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
মূলত, সুস্থধারার রাজনীতি চর্চার অভাবেই আমলাদের প্রভাব এখন অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ক্ষমতার প্রয়োজনে আমলানির্ভরতার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে রাজনীতিবিদদের দক্ষতার অভাবেও এটা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘রাজনীতি করবেন রাজনীতিবিদরা। কিন্তু এখন তা করছেন আমলারা। তারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছিন এবং রাজনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছেন। একই সাথে তারা ক্ষমতার অপব্যবহারও করছেন দেদারছে।
আমলাতন্ত্র (Bureaucracy) এমন এক ব্যবস্থা যাতে স্থায়ী সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব বিভাজনের মাধ্যমে সরকারের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। আমলারা জনপ্রতিনিধি নয় বা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নয়। ফলে রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলারা পদ হারান না। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই আমলাতন্ত্রে সরকার পরিচালনার ধারাবাহিকতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত হয়। আমলারা হলেন সরকারের অংশ যারা অনির্বাচিত। ঐতিহাসিকভাবে, আমলারা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। যারা জনগণের ভোট দ্বারা নির্বাচিত নন। বর্তমান সময়ে, আমলাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ের বড় একটি অংশ পরিচালিত হয়।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ তথা জনপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্রের আইনকানুন, নীতিকৌশল আর উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করবেন, আর জনআকাক্সক্ষা পূরণে জনপ্রশাসনের সদস্যরা জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ ও মতামতকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নকে নিশ্চিত করবেন-এটিই তো প্রত্যাশিত। কিন্তু আমলাদের হাতেই এখন সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ। আর রাজনীতিকদের ভূমিকা ‘ধর হে লক্ষ্মণ’ আর ‘তাল পাতার সেপাই’-এর মত। যা কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য নয়।
রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতা হারাচ্ছেন আর আমলারা ক্ষমতা অর্জন করছেন একথা বলতে কোন বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না বরং গরু-ছাগল চেনার যোগ্যতা থাকলেই তা উপলব্ধি করা যায়। কারণ, স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা এখন ইউএনও/ডিসির কাছে পুরোপুরি অসহায়। বস্তুত জনপ্রতিনিধিরা এখন প্রায় ক্ষেত্রেই ক্ষমতাহীন স্বাক্ষীগোপাল মাত্র। ডিসি, ইউএনওর ওপর তারা কোনভাবেই প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। এ বিষয়ে একজন সংসদ সদস্যের উপলব্ধি গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। আর তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক ও বেদনাদায়ক। তিনি এক তদবিরকারীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘কোনরকম মানসম্মান নিয়ে বেঁচে আছি, দেখো কোনোভাবে ইউএনও বা ডিসি সাহেবকে বলা যায় কিনা’! একজন সংসদসদস্যের এরচেয়ে বড় আত্মপ্রবঞ্চনা ও অসহায়ত্ব আর কী হতে পারে?
এ বিষয়ে এক উপজেলা চেয়ারম্যানের অভিমত আরও বেদনাদায়ক। তার ভাষায়, ‘আমরা তো নিয়ম রক্ষার পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও সাহেব রাজি না হলে কাজ হবে না’। এসব ঘটনায় প্রমাণ হয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে আমলারাই অতিমাত্রায় শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। আর রাজনীতিবিদরা ক্রমেই প্রাসঙ্গিতা হারাচ্ছেন।
স্বাধীনতার মাত্র ৫ দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। এরশাদের আমলে এদেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু হয়েছিল। সেই সময়ে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের কাছে উপজেলার কর্মকর্তাদের কাজের জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা ছিল। পরিষদের সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুধুমাত্র সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতেন। জনপ্রতিনিধি উপজেলা পরিষদের সদস্যরা মাসিক সভায় সামনের কাতারে আর কর্মকর্তারা পেছনের সারিতে বসতেন। কর্মকর্তারা উপজেলার মাসিক সভায় হাজির হওয়ার আগে জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হওয়ার ভয়ে তটস্থ থাকতেন, অপেক্ষাকৃত দুর্বল নৈতিকতার অধিকারী কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক নাজেহালের ভয়ে আতঙ্কে সময়ের হিসাব কষতেন। এখন পরিস্থিতির কিন্তু বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। ফলে সুশাসন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই চলছে নানা ধরনের অসঙ্গতি।
কারণ, হাল আমলে পুরো গণেশই উল্টে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এখন তো জনপ্রতিনিধিরা তটস্থ থাকেন, কর্মকর্তাদের উচ্চ কন্ঠের ভয়ে। চেয়ারম্যান সাহেবরা করুণা আর দয়া-দাক্ষিণ্যের অনুসন্ধানেই ব্যস্ত থাকেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সভাপতির চেয়ারে বসলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সন্তুষ্ট করাই যেন উপস্থিত সদস্যদের একমাত্র কর্তব্য হয়ে উঠে। কোনোভাবে নির্বাহী কর্মকর্তার চক্ষুশূল হলে বাজেট বরাদ্দ কাটছাঁটের ভয়ে জনপ্রতিনিধির হৃদয় কেঁপে উঠে। সামরিক স্বৈরাচারের আমলেও যে জনপ্রতিনিধিরা বুক ফুলিয়ে উপজেলার মাসিক সভায় হাজির হয়ে কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতে বাধ্য করতেন। কিন্তু সে অবস্থা আর অবশিষ্ট নেই। কারণ, আমরা এখন আমলাতান্ত্রিক গণতন্ত্র চর্চা করছি। তারাই এখন সবকিছুরই নিয়ামক। এমনকি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের অনুষঙ্গও।
জাতির যেকোন সঙ্কটকালে যেমন রাজনীতিকরাই ভরসা। আমলাতন্ত্রের প্রতিভূরা এখনো ‘ভাই’ বা ‘আপা’ সম্বোধনে বিব্রত বোধ করেন, বিনা অনুমতিতে দপ্তরে প্রবেশ আইনত দণ্ডনীয় বলেই বিশ্বাস করেন, সেই আমলাতন্ত্র কখনো রাজনীতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের জন্য সহায়ক হতে পারে না। আমলানির্ভরতাকে সহনীয় পর্যায়ে এনে গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে, কাগুজে মর্যাদা নিয়ে যতই আত্মতৃপ্তি খোঁজা হোক, তা কখনোই সম্মানজনক নয়; বরং তা রীতিমত আত্মপ্রবঞ্চনা। উন্নয়নের নামে আমলাতান্ত্রিক গণতন্ত্র জনবিচ্ছিন্নতার পথকেই করবে আরও দীর্ঘায়িত। আর এর ভিকটিম হতে হয় রাজনীতিকদেরই।
তাই দেশকে আইন ও সাংবিধানিক শাসনে ফিরিয়ে নিতে এই অশুভবৃত্ত থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে। নিজ কক্ষপথে ফিরিয়ে আনতে হবে আমলাতন্ত্রকে। কারণ, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমলাদের অপেশাদারী, দলবাজ ও স্বেচ্ছাচারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অগ (Ogg) বলেন,(’’The body of the civil servants is an expert, professional, non-political, permanent and subordinate staff .’’) অর্থাৎ ‘রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা হবে সুদক্ষ, পেশাদারী, অধীনস্থ কর্মকর্তা যারা স্থায়ীভাবে চাকরি করেন এবং রাজনীতির সাথে যাদের কোনো সংশ্রব নেই’। অন্যথায় গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরায়ই থেকে যাবে।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম