স্টাফ রিপোর্টার: দিনের পর দিন নিত্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। কখনো চালের দাম, কখনো ডিমের দাম আবার কখনো সবজির দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। মোটা চালের দাম আবারও কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। সরু বা চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মোকামে চালের দাম চড়া। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে ঢাকায় চাল আনতে খরচ বেশি পড়ছে। এ কারণে তাদেরকে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গরুর গোশতের দামও কেজিতে ২০টাকা বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, চালের দাম এখনো বাড়তি। কমেনি ডিম, মাছ, ব্রয়লার মুরগির দাম। মুদি বাজারে বেড়েছে গুঁড়া দুধের দাম। চড়া সবজির বাজারও।
চালের বাজারে দেখা গেছে, মোটা চাল (স্বর্না ও চায়না ইরি) বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। তবে একটু নি¤œমানের এই চাল গত সপ্তাহে ৪৭ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। এখন ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের চালের (বি আর ২৮) দাম এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে এই চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা মানভেদে সরু চাল বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের বিক্রি বেশি। ভালো মানের মিনিকেট ৭৫ টাকা, আর নাজিরশাইল কিনতে প্রতি কেজির জন্য গুনতে হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি।
দাম বাড়ার তালিকায় আটা ময়দাও রয়েছে। যদিও বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে আটার দাম এখনও বাড়তি। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দুই কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। খোলা ময়দা কেজিপ্রতি রাখা হচ্ছে ৬০ টাকার কাছাকাছি। দোকানিরা বলছেন, প্যাকেট আটার দাম কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মতো। অর্থাৎ যে আটা (প্যাকেট) ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেতো, এখন সেই আটা কিনতে হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে।
খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। দোকানিরা গত সপ্তাহে খোলা ময়দা ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এ সপ্তাহে তারা বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ৫৮ টাকা কেজি দরের খোলা ময়দা চলতি সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে গত সপ্তাহে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা মসুর ডাল (ছোট দানা) এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। আর ১৩৫ টাকা কেজি দরের (নেপালি) মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। বাজারে এখনও মোটা ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। গত সপ্তাহের ২৪ টাকা কেজি দরের (হলেন্ডার) আলু চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকায়। কোথাও কোথাও ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি।
বাইরে চীন থেকে আমদানি করা আদা ও রসুন কিনতে হচ্ছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, আর রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পাম তেল ও চিনির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করলেও বাজারে তার কোনও প্রভাব নেই। এখনও সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা কেজি দরে। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
খুচরা বাজারে এখনো প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গরুর গোশত প্রতি কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা।
এদিকে ঢাকার সবজির বাজারে দেখা গেছে প্রায় সব সবজির দাম বেশ চড়া। পেঁপে ছাড়া কোনো সবজির কেজি ৫০ টাকার কমে মিলছে না। মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন, করলা, কাকরোল, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। নতুন শিম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কচুর মুখি, কচুর লতি, ঝিঙে, ধুন্ধল ও পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর প্রতিটি বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। শীতের আগাম সবজির মধ্যে বাজারে ওঠা মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
নতুন করে বেড়েছে গুঁড়া দুধের দামও। বিক্রেতারা জানান, চলতি বছরে এর আগে তিন দফা দাম বেড়েছিল এ নিত্যপণ্যটির। এখন আবারও বাড়ানো হয়েছে। এ দফায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড অনুযায়ী প্রতি কেজি দুধের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিভেদে দুধের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন প্রতি কেজি ডানো ৮৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮৪০ টাকা, ফ্রেশ ৭১০ টাকা ও মার্কস ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মাছের দামও বাড়তি। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আকার ভেদে কেজি প্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। যে ইলিশ ৭০০ টাকা ছিল, সেটি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। ১৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।
এছাড়া ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকা, ৫০০ গ্রামের অধিক ওজনের ইলিশের কেজি ৬৫০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৮০০ টাকা, ৮০০ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকা। দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশের বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম