দেশের সার্বিক ব্যাংকিং লেনদেনে হঠাৎ করে মন্দা নেমে এসেছে। গত জুলাই মাসের লেনদেনের যে হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র থেকে পাওয়া গেছে তাতে এ চিত্র দেখা যায়। এ সময়ে আগের মাসের তুলনায় এমআইসিআর নন-এমআইসিআর চেক লেনদেন, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ই-কমার্স সব ক্ষেত্রেই লেনদেন হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরের মাসের হিসাব প্রকাশ না করলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর অনুসারে ওই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতে বড় কোনো মন্দা সৃষ্টির আগে এই প্রবণতা দেখা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ই-ব্যাংকিং ও ই-কমার্সের সর্বশেষ প্রকাশ করা জুলাই ’২২ মাসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিবেচ্য সময়ে এমআইসিআর ও নন-এমআইসিআর চেকের লেনদেনের অংক ২৭.৬০ শতাংশ কমে ২০ হাজার ১৫২ কোটি টাকায় নেমে গেছে। একই সময়ে লেনদেনের সংখ্যা কমেছে ২৮.৩৮ শতাংশ। বিবেচ্য সময়ে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) ব্যাংক লেনদেন ১০.৭৬ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৪০ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকায়। রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) এ লেনদেন ২৩.৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে চার লাখ ১৫ হাজার ৫২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
জুলাই ’২২ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ই-কমার্স লেনদেনও হ্রাস পেয়েছে আগের মাসের তুলনায়। ইন্টারনেট ব্যাংকিং এ সময়ে এক শতাংশের মতো হ্রাস পেয়ে ২৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অন্যদিকে ই-কমার্স লেনদেনের অংক ১.১১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৯৯২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
বিশেষায়িত ধরনের যে ব্যাংক হিসাব রয়েছে তাতেও লেনদেন জুলাই ’২২ মাসে আগের মাসের তুলনায় কমে গেছে। কৃষক, হতদরিদ্র, সোশ্যাল সেফটি ও অন্যান্য বিশেষ ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের অংক আগের মাসের তুলনায় ৫.৫৭ শতাংশ কমে চার হাজার ৮০৪ কোটি টাকায় নেমেছে। এসব হিসাবের শহরকেন্দ্রিক হিসাবে লেনদেন দুই হাজার ১৫৮ কোটি টাকা থেকে কমে দুই হাজার ৬২ কোিেট টাকায় নেমে এসেছে। আর গ্রামকেন্দ্রিক বিশেষ ব্যাংক হিসাবে দুই হাজার ৯২৯ কোটি টাকা থেকে কমে দুই হাজার ৭৪১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এসব বিশেষায়িত ব্যাংক হিসাবে ভর্তুকির অংক ৮০ শতাংশ কমে ১২০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানিয়েছে, জুলাই মাসের আনুষ্ঠানিক হিসাবে যে প্রবণতা দেখা গেছে সেটি পরবর্তী আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেও অব্যাহত রয়েছে। অধিকন্তু ক্ষেত্রবিশেষে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের লেনদেনের এ অবনতিশীল অবস্থা অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতির বড় ধরনের মন্দা বলয়ে প্রবেশের লক্ষণ। সাধারণভাবে টাকার প্রকৃত মূল্যমান কমার সাথে সাথে একই অনুপাতে সরবরাহ বৃদ্ধির কথা। এতে আনুপাতিক প্রভাব ব্যাংক লেনদেনেও পড়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো চিত্র খুবই উদ্বেগজনক বিষয়। এ বিষয়টিতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সোর্স : নয়া দিগন্ত