পিরোজপুরের মেয়ে নুসরাত জাহান কেয়া। রাজধানীর ইডেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই। ফলে বাধ্য হয়েই থাকেন কলেজের জেবুন্নেছা ছাত্রীনিবাসের ৫০২নং কক্ষে। এ সিটটি প্রশাসনিকভাবেই তিনি পেয়েছেন। এই কক্ষে ওঠার আগে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তিনি। তখন ছাত্রলীগের এক নেত্রীর মাধ্যমে তাকে খোদেজা খাতুন ছাত্রীনিবাসে উঠতে হয়।
এজন্য শুরুতেই তাকে গুনতে হয় এককালীন ১২ হাজার টাকা। এরপর প্রতি মাসে আরও দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। সেটি ছিল ‘পলিটিক্যাল রুম’। কক্ষের পরিবেশ ও নেত্রীদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে দুদিনও সেই কক্ষটিতে থাকতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়েই কক্ষটি থেকে নেমে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শুরু করেন। অনেকদিন পর বহু কষ্টে জেবুন্নেছা ছাত্রীনিবাসে একটি বৈধ সিটের ব্যবস্থা হয় তার।
৪ দিন আগের দুঃসহ সেই দিনগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন এই ছাত্রী। এরপর থেকেই নানা ধরনের হুমকি-ধমকির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে। কয়েক দফায় তার কক্ষে গিয়ে শাসিয়ে এসেছেন রাজনৈতিক রুমের ‘কতিপয় ছাত্রী’। এ অবস্থায় ভয়ে হলের বৈধ সিটও ছেড়েছেন তিনি। এরপরও অনবরত তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে ভয়াবহ এ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন কেয়া। শুধু তিনিই নন, ছাত্রীদের জন্য আবাসন রয়েছে রাজধানীর এমন তিনটি সরকারি কলেজে খোঁজ নিয়ে সিট বাণিজ্যের প্রায় একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে। কলেজগুলো হলো-ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং গভর্নমন্টে কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স (গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ)। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে ভালো চিত্র পাওয়া গেছে তিতুমীর কলেজের দুটি ছাত্রীনিবাসে। এসব কলেজই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারি কলেজগুলোর আবাসিক হলে নিয়ম অনুযায়ী নামমাত্র টাকায় মেয়েদের থাকার সুবিধা রয়েছে। অথচ বছরের পর বছর সেগুলোর বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ করছেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। সিট ভাড়া দিয়ে বছরে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যেও দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন তারা। লাখো শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসগুলোতে সামান্য কয়েকজন নেত্রীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্রীরা। তবে ছাত্রলীগ নেত্রী ও প্রশাসনের ভয়ে তাদের অনেকেই মুখ খুলতে চান না।
তারা আরও জানান, লোকলজ্জার ভয়ে অথবা ঢাকায় থাকার জায়গা না থাকায় নানা নির্যাতন মেনেই হলগুলোতে থাকতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। জড়িত নেত্রীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণে রহস্যজনক কারণে অধিকাংশ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে কিছুদিন পরপরই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ফলে আতঙ্ককে নিত্যদিনের সঙ্গী করে দিন কাটছে ছাত্রীদের।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিক্ষা ও অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান যেগুলো রয়েছে তার মধ্যে ইডেন কলেজের বিষয়ে অভিযোগগুলো সবচেয়ে বেশি আসে। হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিট দখলে রাখার বিষয়টি দেখা যায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা পায়। তাদের একটা রাজনৈতিক পরিচিতিও আছে। এগুলো যেহেতু চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে এবং বিবদমান গোষ্ঠীগুলো বাড়াবাড়ি করছে, এ অবস্থায় কলেজ প্রশাসনের একটা উদ্যোগ খুব জরুরি। ইডেন কলেজে প্রশাসন ইতোমধ্যে তদন্ত করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটা তদন্ত শুরু হবে। তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও যুক্ত থাকবে। এ হোস্টেলগুলো যাতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়, সেই সুপারিশ সেখানে অবশ্যই আসবে। আমরা চাইব, কলেজ কর্তৃপক্ষ যেন সেগুলো বাস্তবায়ন করে।
ভুক্তভোগীরা জানান, সিটের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাম এলাকা থেকে আসা অসহায় মেয়েরা। কারণ সিট বাণিজ্যের ফলে ক্যাম্পাসগুলোতে আবাসন সংকট রয়েছে। ফলে প্রথম বর্ষে এসেই যারা থাকার জায়গা পান না, নেত্রীদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না। প্রশাসন সিট দিতে না পারলেও এককালীন ১০-২০ হাজার টাকা দিলে নেত্রীরা ঠিকই হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর মাসে মাসে দিতে হয় বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। ৬-৮ জনের কক্ষে তারা ১৬-২০ জনকেও রাখেন। অনেককে থাকতে হয় রুমগুলোর ফ্লোরে। চলতে হয় নেত্রীদের ইচ্ছা অনুযায়ী। বাধ্য হয়ে যেতে হয় দলীয় কর্মসূচিতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রীদের সিট ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইডেন মহিলা কলেজের। প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্রীর এই প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র ছয়টি ছাত্রীনিবাস আছে। এই আবাসিক হলগুলোতে তিন হাজার ৩১০টি সিটের বিপরীতে থাকছেন ১০ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। অবৈধভাবে যারা হলে অবস্থান করছেন, তাদের মূল নিয়ন্ত্রক ছাত্রলীগ নেত্রীরা। বৈধ আসনের বাইরে সাত হাজার শিক্ষার্থী অবৈধভাবে হলে অবস্থান করলে এবং গড়ে তাদের থেকে ১২ হাজার করে টাকা নিলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের দুটি ছাত্রীহলের অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা।
এই প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ছাত্রীর বিপরীতে আবাসিক সিট রয়েছে ৭৫০টির মতো। গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সেও (গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ) অধিকাংশ সিটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ছাত্রলীগ। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে সিট পাওয়া এখানে অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। এই সুযোগে ছাত্রলীগ নেত্রীরা টাকা নিয়ে ছাত্রীদের হলে তোলেন।
অন্যদিকে বিপরীত চিত্র পাওয়া গেছে তিতুমীর কলেজের ছাত্রীনিবাসে। সেখানে মেয়েদের জন্য দুটি ছাত্রীনিবাস আছে। এছাড়া আরও একটি ১০ তলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০-১২ হাজার ছাত্রী রয়েছেন। এখানকার ছাত্রীনিবাসগুলোর চিত্র এখনো অনেকটা ভালো। এই কলেজের ছাত্রী হলগুলোতে ৮০ শতাংশেরও বেশি সিটের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতেই রয়েছে।
জানতে চাইলে সরকারি কলেজগুলোতে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তিলোত্তমা সিকদার যুগান্তরকে বলেন, যে অভিযোগগুলো আসছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে। এমন বেশকিছু অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত করে সত্যতা পাইনি। ফলে কোনো অভিযোগ এলেই যে তা সত্য, এমনটি বলার কোনো সুযোগ নেই। হলের সিট সব সময় প্রশাসনই নিয়ন্ত্রণ করে। ছাত্রীদের সিট নিশ্চিতের দায়িত্বও প্রশাসনেরই। এখানে ছাত্রলীগের কিছু নেই। বরং ছাত্রলীগ সব সময় শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণে কাজ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইডেন কলেজের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি।
ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের নেত্রীদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনার পর সিট রাজনীতির বিষয়টি সামনে আসে। এ সময় সিটকেন্দ্রিক রাজনীতির মাধ্যমে ছাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করে নির্যাতনের নানা ঘটনাও প্রকাশ পায়। সাধারণ শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান কেয়ার মতো ছাত্রলীগ নেত্রীদের একটি অংশও এই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসতে থাকেন। ছাত্রীদের কক্ষে আটকে আপত্তিকর ছবি তোলা, অনৈতিক কাজে বাধ্য করা এবং বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর অভিযোগও আসে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।
এসব নিয়ে গণমাধ্যমেও কথা বলেন ছাত্রলীগের অন্তত তিন নেত্রী। যদিও ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। কিন্তু এরই মধ্যে এই দুজনের (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগে আদালতে একটি মামলা করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে থাকলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের দ্বারা টিপ্পনীর শিকার হচ্ছেন বলে যুগান্তরকে জানান তিনি।
ইডেনের এক ছাত্রী বলেন, ‘কয়েকজন নেত্রীর কাছে ইডেন কলেজ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। তাদের অপকর্মের বদনামের ভাগ কখনোই প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রী নিতে পারে না। এজন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার বিচার করতে হবে। আমরা সবাই এখন ভয়ের মধ্যে আছি।’
অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যকে বৃহস্পতি ও শুক্রবার অসংখ্যবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে এর আগে গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগ নেত্রীরা নয়, কর্তৃপক্ষই ছাত্রীনিবাস চালায়। সর্বশেষ যে ঘটনাটি ঘটেছে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে বদরুন্নেসা কলেজের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী যুগান্তরকে জানিয়েছেন, তারাও সেখানে ছাত্রলীগের মাধ্যমে হলে উঠেছেন। এজন্য তাদের এককালীন ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে বছরে একবার হলে ওঠার সুযোগ থাকে। তবে নেত্রীরা চাইলে বছরের যে কোনো সময় মেয়েদের হলে ওঠাতে পারেন। ছাত্রত্ব শেষ, বিবাহিত অথবা বহিরাগতরাও থাকেন কক্ষগুলোতে। এজন্যও নেত্রীদের দিতে হয় টাকা। নতুন হল ও পুরাতন হলে ভাগ করে দুই নেত্রী টাকা তোলেন। অনেক সময় অবৈধভাবে তুলে বৈধ করে দেওয়ার কথা বলে আরও পাঁচ হাজার টাকা নেয়। পরে বৈধও করে না, আর টাকাও ফেরত দেয় না। রুম দখল নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে চলতি বছরের জুনে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এই কলেজের হলে তিন বছর ধরে থাকছেন এমন এক ছাত্রী নাম না প্রকাশ করে যুগান্তরকে জানান, ‘হলে সবই হয় ছাত্রলীগ নেত্রীদের কথায়। প্রশাসন সব জানলেও কিছুই করে না। অবশ্য মাঝে একবার কয়েকজন বহিরাগতকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার পরিস্থিতি আগের মতোই। তাদের প্রভাবে বৈধভাবে সিট বরাদ্দ পাওয়া ছাত্রীরাও কক্ষে উঠতে পারে না। শুধু তাই নয়, দুই হলের দুটি ডাইনিংয়ের খরচেও ভাগ বসিয়েছেন তারা। সেখান থেকে মাসে ১৫ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। ফলে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় আমাদের খাবারের মানও অত্যন্ত খারাপ থাকে। অনেক সময় ছাত্রীরা গিয়ে খাবার পায় না।’ তবে ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার কোনো ঘটনা গত ৩ বছরে তিনি দেখেননি বলে জানান।
অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে সোনালী আক্তার শেলীকে কল করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে হাবীবা আক্তার সাইমুনকে অভিযোগের বিষয়ে বলতেই ‘বাইরে আছি, পরে কথা বলব’ বলে কলটি কেটে দেন।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিকুন নাহার যুগান্তরকে বলেন, আগে এক সময় এমন ছিল, তবে এখন আর নেই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন হোস্টেল সুপার, সহকারী সুপার দিয়েছি, তারাই এখন দায়িত্ব নিয়ে সিটের বিষয়গুলো দেখছেন। নেত্রীদেরও এখন আর সেই সুযোগটা দেওয়া হচ্ছে না। হলগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। এখন মেয়েরা বলে, আমাদেরও তো চলতে হয়। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে তারা কী করে সেগুলো আমার এখনো জানা নেই। সবকিছু নিয়মের মধ্যেই আছে। এরপরও যতটুকু অনিয়ম আছে, সেগুলোও নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসব। ডাইনিং থেকে টাকা নেওয়ার কোনো অভিযোগও কখনো পাননি বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় অবস্থিত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের একটি ছাত্রীনিবাসে তিনটি ভবন আছে। এগুলোর সিটের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ এখনো ছাত্রলীগের হাতে। কলেজটির ভুক্তভোগী অন্তত চার ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখানকার ৫০-৫৫ ভাগ সিট ছাত্রলীগ নেত্রীদের দখলে। ১০-২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাত্রীদের হলে ওঠান তারা। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের এক প্রকারের জিম্মি করেই টাকা নেন। এই ছাত্রীদের মধ্যে যাদের ঢাকায় বাসা নেই এবং বাইরে থাকারও সামর্থ্য নেই, তারাই নেত্রীদের মূল টার্গেট।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী যুগান্তরকে বলেন, হলে যারা থাকে তাদের সবাই বৈধভাবে থাকে। তারা নেত্রীদের কোনো টাকা দেয় না। টাকা যা দেওয়া হয় তা প্রশাসনকে দেওয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে হলে উঠলেও সেই টাকা হল প্রশাসন নেয়।
টাকা নিয়ে ছাত্রীদের হলে তোলার অভিযোগের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ইসমত রুবিনা যুগান্তরকে বলেন, ‘এটা আপনি খোঁজ নেন। আমরা তো বিষয়টা জানব না, তাই না? ওরা কী করে, না করে। ওরা তো ফি দেয়। আমাদের হল ভাড়া দেয়। অল্প হলেও ওরা আমাদের সিট ভাড়া দেয়। ছয় মাস বা বছরেরটা একবারে নিয়ে নেওয়া হয়।’ প্রশাসন টাকা কি শিক্ষার্থী নাকি নেত্রীদের থেকে নেয়-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জেনে দেখি, আরও তথ্য নিই, এরপর আপনি কলেজে এলে এ বিষয়ে কথা বলি।’
রাজধানীর তিতুমীর কলেজের দুটি ছাত্রীহলের পরিস্থিতি অনেকটা আশাব্যঞ্জক। মেয়েদের হলগুলোতে রাজনৈতিক আধিপত্য নেই বললেই চলে। এখানকার ছাত্রীরা জানান, কলেজগুলোতে এখনো প্রশাসনের মাধ্যমেই সিট দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে কলেজটির রসায়ন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী মারজিয়া আফরোজ মিলি যুগান্তরকে জানান, এখানকার পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে প্রশাসনের হাতে। অনেক সময় শিক্ষকরা সিনিয়র ছাত্রীদের সঙ্গেও পরামর্শ করেন। অনার্সের পর ছাত্রীরা আর এখানে থাকেন না। ফলে এখনো হলে পড়াশোনার চমৎকার পরিবেশ রয়েছে।
সোর্স : যুগান্তর