আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংক নিয়ম লঙ্ঘন করে আগ্রাসী কায়দায় ঋণ বিতরণ করছে। এভাবে ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের অঙ্কও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছেন আমানতকারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার দাঁড়িয়েছে ১০২ দশমিক ২৮ শতাংশ। যদিও প্রচলিত ব্যাংক হিসাবে মোট আমানতের ৮৭ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। সেই হিসাবে প্রায় ১৫ শতাংশ ঋণ বেশি বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণ সীমার সরাসরি লঙ্ঘন। এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হারও প্রায় ২২ শতাংশ। ৫ শতাংশের বেশি হলে তা ঝুঁকি হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ৮৯ দশমিক ১৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। একটি প্রচলিত ব্যাংক হিসাবে মোট আমানতের ৮৭ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারে ব্যাংকটি। নিয়ম অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংক ২ দশমিক ১৪ শতাংশ ঋণ বেশি বিতরণ করেছে। এভাবে ঋণ বিতরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত ঋণের সীমা লঙ্ঘন। বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৫৯ শতাংশই ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কয়েকটি ব্যাংক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঋণ
বিতরণ করছে। ফলে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে। এতে কোনো কোনো ব্যাংক সময়মতো গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। যা আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি করে।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একটি প্রচলিত ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে। আর ইসলামি ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে ৯২ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফার্মাস ব্যাংক) ঋণ বিতরণ করেছে ৮৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। যদিও প্রচলিত ব্যাংক হিসাবে মোট আমানতের ৮৭ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করা যায় না। সেই হিসাবে ব্যাংকটি ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সীমার লঙ্ঘন। জুন শেষে পদ্মার খেলাপির হার ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
আবার এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড ৯৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। কিন্তু এটি ইসলামী ব্যাংক হিসাবে আমানতের ৯২ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ ঋণ বেশি বিতরণ করেছে। এভাবে ঋণ বিতরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সীমা লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি ব্যাংক কিছুটা বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক চলমান রেখেছে। বড় কোনো ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অপর একটি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার ৯২ দশমিক ২২ শতাংশ। কিন্তু ইসলামি ব্যাংকিং হিসাবে এটি ৯২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। সেই হিসাবে এটিও দশমিক ২২ শতাংশ ঋণ বেশি বিতরণ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক প্রভাব খাটিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর চেষ্টা করছে। যদিও উভয় ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সে কারণে তাদের খেলাপি ঋণ বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহিদুল হক বলেন, ‘আমি নতুন করে এ ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছি। আগে যে হারে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। ঋণ বিতরণে অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সোর্স : যুগান্তর