সরকার নির্ধারিত দামে চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। সরকারিভাবে দাম কমানো হলেও চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে এই দুটি ভোগ্যপণ্য। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও ভোজ্যতেল।
আবার নগরীর চেয়ে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুদির দোকানগুলোতে আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ২২ সেপ্টেম্বর সরকার চিনি ও পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমিয়ে নির্ধারণ করে দেয়। যা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে কাঁচাবাজারে মাছ ও সবজির দামও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার পাম সুপার (খোলা তেল) মিলগেট থেকে ১২৮ টাকায় কিনে পরিবেশকরা ১৩০ টাকায় বিক্রি করবেন। আর খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হবে ১৩৩ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা চিনি মিলগেটে ৭৯ টাকায় কিনে পরিবেশক পর্যায়ে ৮১ টাকা এবং খুচরায় বিক্রি হবে ৮৪ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি মিলগেটে ৮২ টাকায় কিনে পরিবেশকরা বিক্রি করবে ৮৪ টাকা। ভোক্তাদের কাছে চিনি বিক্রি হবে ৮৯ টাকায়। অথচ এই দাম কার্যকর হওয়ার চার দিন পার হলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাবই নেই।
চট্টগ্রামের কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে দামে চিনি ও পাম অয়েল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা এখনও কম দামের চিনি ও তেল বাজারে বিক্রি করছেন না। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। দাম কমার পরিবর্তে উলটো চিনির দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। ৪২০০ টাকার চিনির বস্তা শুক্রবার কিনতে হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। প্রতি কেজি চিনির কেনা দাম পড়ছে ৮৬ টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে যাতায়াত খরচ।
কাঁচা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯২ টাকায়। যা বিক্রি হওয়ার কথা ৮৪ টাকা কেজি দরে। আবার কিছু দোকানে আরও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। যার সরকার নির্ধারিত দাম ৮৯ টাকা। বাজারে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকায়। সরকার খোলা পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ১৩৩ টাকা প্রতি লিটার।
এছাড়া খোলা সয়াবিনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। এক লিটারের বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা থেকে ১৯২ টাকা। ৫ লিটারের তেল বিক্রি হয়েছে ৯২০ থেকে ৯৪৫ টাকায়। সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা লিটার।
ক্রেতারা বলছেন, কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবে সরকার-এমন বিষয় আঁচ করতে পেরেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু যখন দাম কমানোর ঘোষণা দেয় তখন আর দাম কমায় না। নানা গড়িমসি ও অজুহাতে বাড়তি দামেই পণ্য বিক্রি করে। সহজেই কম দাম কার্যকর হয় না। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছে। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগের দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাজারে। দাম কমার পর এ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও দাম বাড়ার সময় দেখা দিয়েছিল ভিন্ন পরিস্থিতি। তখন সরকার নতুন দাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে খুচরাসহ সব বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয় বিক্রেতারা। অথচ এখন দাম কমানোর ঘোষণার প্রায় এক সপ্তাহ পরও সেই সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
কাঁচা বাজারদর : চট্টগ্রামে সবজির বাজারেও স্বস্তি নেই। প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা, পটোল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, শিম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, গাজর ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা। মাঝারি পাঙ্গাশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ টাকা। এক কেজি রুই ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, যা আগে ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। দেড়-দুই কেজি রুই ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
সোর্স : যুগান্তর