সেপ্টেম্বর মাসে দেশে রেকর্ড ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। ৩০ দিনে ৯ হাজার ৯১১ জন আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার অক্টোবরের প্রথম দিনেই সারা দেশে ৬২৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু চলে যাবে বলে আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছে। তা সত্ত্বেও পশ্চিমা ও পূবালী বায়ুর সংমিশ্রণে এ মাসেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবার এ মাসে কমপক্ষে দুইটি নিম্নচাপ হতে পারে। নিম্নচাপ হলে সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ মাসেও ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটাতে না পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। উল্লেখ্য, ডেঙ্গুতে গত জুলাই মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি শনাক্ত ছিল আগস্টে এবং আগস্টের চেয়ে প্রায় তিনগুণ আক্রান্ত হয়েছে সেপ্টেম্বরে। আগস্টে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল তিন হাজার ৫২১ জন এবং জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৫৭১ জন। এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, চলতি অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সেপ্টেম্বরের চেয়ে বাড়বে বৈ কমবে না।
সেপ্টেম্বর মাসে এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুর কারণে। গতকাল অক্টোবর মাসের শুরুতেই একজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যদিও এ মৃত্যুটি রেকর্ড করা হয়েছে গত শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়।
গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত যে ৬৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ৫১৮ জন। একই সময়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১১৭ জন।
গতকালকের একজন মৃত্যুসহ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছে দুই হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এক হাজার ৬৫৮ জন।
ঢাকা মহানগরীতেই বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন। এই শহরটি অনেক বেশি ঘন বসতি হওয়ায় এই শহরের মানুষ সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা: মাহমুদ জাকারিয়া বলছেন, ঢাকা শহরে যেভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তা কাজ করছে না। মশার ওষুধ ছিটানোর বর্তমান পদ্ধতিটি বাতিল করে নতুনভাবে আরো বৈজ্ঞানিক উপায়ে তা প্রয়োগ করার চিন্তা করতে হবে, নয়তো বর্তমান ওষুধ ছিটানো বন্ধ করে আরো কার্যকর ওষুধ আনতে হবে। একই সাথে ঢাকার মেয়রদ্বয়কে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে বাড়ির আশপাশের এলাকায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনের দিকে মেয়রদ্বয়কে নজর দিতে হবে। ডেঙ্গুবিষয়ক যতগুলো সার্ভে হয়েছে সেসবগুলো নির্মাণাধীন ভবনেই বেশি ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। অতএব, নির্মাণাধীন ভবনে দীর্ঘদিন জমে থাকা পানি পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে আগে। একই সাথে বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি এবং বাড়ির ভেতরে জমা পানির দিকে নজর দিতে হবে যেন কোথাও এডিস মশা বংশবিস্তার করতে না পারে।
সোর্স : নয়া দিগন্ত