চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। গভীর রাত থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত গ্যাস থাকে, যা কারও কাজে লাগে না।
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০২: ০৮
রাজধানীর অনেক এলাকায় সারা দিনে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না, জ্বলছে না চুলাফাইল ছবি
গ্যাসের সংকটে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় দিনের বেলায় জ্বলছে না রান্নার চুলা। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ সময়ে গ্যাস তেমন কাজে লাগছে না। অনেকেই এখন পাইপলাইনের গ্যাসের পাশাপাশি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। এতে পরিবারের খরচ বেড়েছে। তবে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
গ্যাস-সংকটের কথা জানিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শনিবার প্রথম আলো কার্যালয়ে অনেকে ফোন করে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, কয়েক দিন আগেও সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যেত। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ভোর পাঁচটার পরই গ্যাসের চাপ কমে যায়। যে চাপ থাকে, তাতে চুলা নিবু নিবু করে জ্বলে, রান্না করা যায় না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জরুরি অভিযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ করেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছে, এক মাস ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কম বলে তারাও অভিযোগ পাচ্ছে।
জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, পান্থপথ, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, মিরপুর, পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মান্ডা, বাড্ডা, বসুন্ধরা থেকে গ্যাস-সংকটের বিষয়ে অভিযোগ আসছে বেশি। এরই মধ্যে গতকাল গুলশান, বনানী, বাড্ডা থেকে অনেকেই গ্যাস-সংকটের বিষয়ে অভিযোগ করেন। অবশ্য জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য গতকাল বেলা ২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশান, বনানী, নতুনবাজার ও বাড্ডা এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে আগেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে তিতাস।
পান্থপথের বাসিন্দা আহসান কবির প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, অফিস থেকে রাতে বাসায় ফিরে রান্না করার মতো সময় থাকে না। সকালের দিকেই সারা দিনের রান্না করতে হয়। ভোরেই গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে রেস্তোরাঁ থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। একসময় সর্বোচ্চ ৩২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে। এক মাস আগেও ৩০০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত দিনে সরবরাহ করা হয়েছে। এক মাস ধরে দিনে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে দিনে ৪৮ কোটি ঘনফুট। দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দিনে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের কথা। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমানো হয়েছে। সরকার গত জুলাইয়ে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে।
তিতাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুসারে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। গ্রাহকেরা নিয়মিত অভিযোগ করছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না। দিনে তাঁদের গ্যাসের চাহিদা ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু এখন তাঁরা পাচ্ছেন ১৬০ কোটি ঘনফুটের মতো।
গ্যাসের সংকটে পড়ে নগরীর যেসব বাসিন্দা এলপিজির সিলিন্ডার কিনছেন, তাঁরাও স্বস্তিতে নেই। গ্যাস না পেলেও মাসে বিল দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা। আবার এলপিজির দাম নিয়মিত বাড়ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে অন্তত ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডার। এতে এক সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকা।
গ্যাসের ভোগান্তিতে পড়ে গত শুক্রবার মুগদা বিশ্বরোড এলাকায় প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করেছেন মান্ডা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. ফখরুল ইসলাম। তাঁর প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘মধ্যবিত্তের কান্না, ঘরে হয় না রান্না’ এবং ‘মাসের শেষে বিল দিই, চুলায় কেন গ্যাস নেই?’
ফখরুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আগে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত গ্যাস থাকত না। এখন রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে। কিন্তু এই গ্যাস কোনো কাজে লাগছে না।
সোর্স : প্রথম আলো