স্টাফ রিপোর্টার: বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার গত বৃহস্পতিবার তেল এবং চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়, যা গতকাল রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকালও রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। এদিকে, বাজারে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলও বিক্রি হচ্ছে ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকায়। পুরোনে কায়দায় গ্রাহকের পকেট কাটছে দোকানিরা।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুরোনো অভিযোগ রয়েছে যে, কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে খুচরা প্রতিটি দোকানে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। প্রশাসনের নজর এড়াতে প্রয়োজনে তারা পণ্য গুদামে লুকিয়ে রাখে। তখন তারা বাজারে পণ্যের সরবরাহ নেই বলে জানান। অথচ তাদের কাছে প্রচুর মাল মজুদ থাকে। তেলের বাজারে যখন চরম অস্থিরতা দেখা দিল, তখনও তারা একই কাজ করেছিল। অথচ তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার প্রায় দুই মাস পরে নতুন দামে তেল আমদানি করে। আর দাম বৃদ্ধির ঠিক দুই মাস পরেই তারা নতুন দাম কার্যকর করে। সারা দেশে তখন অভিযান চালিয়েও কোন ফল হয়নি। উল্টো দাম আরও বেড়েছে। দোকানদাররা বাড়তি দামেই বিক্রি করেছে। কিন্তু দাম কমার ঘোষণা দিলে তারা বলেন, নতুন দামে পণ্য আমদানি করলেই তারা কম দামে পণ্য বিক্রি করবেন। এসব পণ্য আগের দামে (বাড়তি) কেনা। সারাদেশে এমন অনিয়ম আসলে কে দেখবে। এর কোন উত্তর ছিল না। আর বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে ক্রেতার পকেট কাটছে খুচরা দোকানদাররা।
অথচ গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা, খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং পাম অয়েলের লিটার ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। যা গতকাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু বিষয়টি না মেনে বাজারে পুরনো বাড়তি দামেই চিনি ও তেল বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমার পরিবর্তে উল্টো চিনির দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। ৪২০০ টাকার চিনির বস্তা আজ কিনতে হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। প্রতিকেজি চিনির কেনা দাম পড়ছে ৮৬ টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে যাতায়াত খরচ।
তারা বলছেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শুনেছি (দেখেছি) চিনি আর তেলের দাম গতকাল থেকে কমানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত নতুন দামে তেল-চিনি গতকাল থেকে পাইকারি বাজারে আসতে শুরু করবে। তবে এগুলো আমাদের কাছে (খুচরা বাজার) আসতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।
এদিকে পুরনো বাড়তি দামে তেল-চিনি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছে সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ তথ্য মতে, রাজধানীতে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা।
তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। এক লিটারের বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা থেকে ১৯২ টাকা কেজিতে। ৫ লিটারের তেল বিক্রি হয়েছে ৯২০ থেকে ৯৪৫ টাকায়। আর খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১২৬ থেকে ১৩৫ টাকা। আর সুপার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা লিটার।
হিজবুল্লাহ স্টোরের মালিক মো. নুরুল হুদা বলেন, খুচরা খোলা চিনি বিক্রি করছি ৯০ টাকা কেজি। তবে যদি পাইকারি ৫-১০ কেজি নেন, তাদের কাছে ৮৮ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, শুনেছি আজ থেকে সরকার চিনির কেজি ৮৪ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আজকে আমার কেনাই পড়েছে ৮৬ টাকা দরে। গতকালের চেয়ে বস্তার দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। ৪ হাজার ২০০ টাকা বস্তা ৪ হাজার ৩০০ টাকায় কেনা পড়েছে। তার সঙ্গে যাতায়াত খরচ সবমিলে সাড়ে ৮৬ টাকা কেজি দামই পড়েছে। এক থেকে দুই টাকা লাভে বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, পাম অয়েল কেজি বিক্রি করছি ১৩৮ থেকে ৪০ টাকা। তবে পাইকারি ১৩৫ টাকা কেজি। সপ্তাহ দুয়েক আগেও পাম অয়েলের দাম কমেছিল। এখনো সেই দামে বিক্রি করছি।
সরকার ১৩৩ টাকা করে নির্ধারণ করে দিয়েছে তারপরও কেন বাড়তি দামে বিক্রি করছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড্রাম (১৮৬ কেজি বা ২০৪ লিটার) আজকে আমাদের কেনা পেড়েছে ৩১ হাজার টাকায়। তাই বেশি দামে কেনায় একটু বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে পাম অয়েলের দাম গত দুই-তিন সপ্তাহে কেজি প্রতি ৪০ টাকা কমেছে। ১৮০ টাকার কেজি পাম অয়েল এখন ১৪০ টাকা বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি। এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পাম অয়েলের পাশাপাশি বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করছি ১৯০ থেকে ১৯২ টাকা। দুই লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ৩৮৪ টাকা। আর ৫ লিটার তেল বিক্রি করছি ৯৪৫ টাকায়।
রামপুরা বাজারে বরিশাল স্টোরের মালিক রুহুল আমিন বলেন, চিনি কেজি ৯০ টাকা। বোতলজাত আধা লিটার তেল ৯২ টাকা এবং এক লিটার তেল বিক্রি করছি ১৯২ টাকায়।
তিনি বলেন, সরকার চিনি ও তেলের দাম কমালেও আমরা কম দামে কিনতে পারিনি। আমরা না পেলে জনগণ কীভাবে পাবে। সরকার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা তো কম দামে মাল ছাড়ছে না। নতুন দামের চিনি ও তেল আসতে আসতে আবারও দাম বাড়িয়ে দেবে ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে, রোববার থেকে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা, খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং পাম তেলের লিটার ১৩৩ টাকায় বিক্রি হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পাম তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মিলগেট, পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ের জন্য আলাদা দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার পাম সুপার খোলা তেল মিলগেট থেকে ১২৮ টাকায় কিনে পরিবেশকরা ১৩০ টাকায় বিক্রি করবেন। আর খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হবে ১৩৩ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা চিনি মিলগেটে ৭৯ টাকায় কিনে পরিবেশক পর্যায়ে ৮১ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হবে ৮৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি মিলগেটে ৮২ টাকায় কিনে পরিবেশকরা বিক্রি করবে ৮৪ টাকা। ভোক্তাদের কাছে চিনি বিক্রি হবে ৮৯ টাকায়। এতদিন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার পাম সুপার খোলা তেল ১৪৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ছিল ৯০ টাকা। সে হিসাবে পাম তেলের দাম কমেছে ১২ টাকা আর চিনিতে দাম কমলো ৬ টাকা।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম