দীর্ঘদিন শান্ত পরিবেশ বজায় থাকার পর দেশে বেড়ে গেছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ। এতে ঘটছে প্রাণহানি। বিঘ্নিত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি’র ৪৯টি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মাঠে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘটছে পুলিশের সংঘর্ষ। কিছু কিছু এলাকায় আবার পুলিশ-বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই সব ঘটনার অধিকাংশই মামলার বাদী হচ্ছেন পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ওদিকে বিএনপি’র সাম্প্রতিক কর্মসূচি চলাকালে ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন স্থানে নতুন করে হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী আসামি হয়েছেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৮ মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩৪১টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৫৪ জন। এসব সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৬ জন। পরে পুলিশ মামলার প্রেক্ষিতে ৩৫০ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিএনপি’র যে ৪৯টি কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে সেই হামলার ঘটনায় সারা দেশে মামলা হয়েছে ৪৬টি। এ মামলার মধ্যে পুলিশ বাদী হয়েছে ২৯টি। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাদী হয়েছেন ১৭ টির। বিএনপি অভিযোগ করেছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে উল্টো তাদের নামে মামলা দায়ের করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি’র ৪৯টি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪৮ জন নেতাকর্মী। বিএনপি’র সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ৭টি সংঘর্ষ হয়েছে। একই সময় বিএনপি’র সঙ্গে পুলিশের ১৭টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলুর ওপর গত ১৭ই সেপ্টেম্বর কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় লাকসাম পৌর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহম্মেদ বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বাদী মনির আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, লাকসাম থানা মামলা না নেয়ায় আদালতে হাজির হয়ে তারা মামলা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছেন।
সূত্র জানায়, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর বিএনপি’র ৭৫ নেতাকর্মীর নামে মামলা করে পুলিশ। পল্লবীতে বিএনপি’র সমাবেশে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জসিম রানাসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের ৭জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব মামলায় দাঙ্গা সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা ও ভাঙচুর করে সমাজে ভীতি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকার বিএনপি’র লোকজনের অভিযোগ যে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ওই হামলা চালিয়েছে। পরে পুলিশ জানায় যে, রূপগঞ্জের ভূলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হানিফ মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় ছাত্রদল নেতা মাসুদুর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
সূত্র জানায়, গত ৬ই সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে বিএনপি’র সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সেখানে বিএনপি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে একটি ও স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বাদী হয়ে থানায় দুইটি মামলা দায়ের করেন।
সোর্স : মানব জমিন