স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে মাছ-গোশতের দাম। বেঁচে থাকার জন্য সবজি আর ডিমের ওপর ভরসা রেখে ছিলেন তারা। কিন্তু বর্তমানে এ দুটো পণ্যের দামও অনেক বেড়েছে। পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৬০ টাকার নিচে মিলছে না। ফলে বাজারে এসে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাজার করতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি চাকরি করি। শুক্রবার ছাড়া বাজার করার সময় থাকে না। মাস শেষে যা বেতন পাই তা দিয়ে সন্তানদের নিয়মিত মাছ-গোশত খাওয়াতে পারি না। প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে সবজির সাথে ডিম খাওয়াই। কিন্তু এখন এই দুটো পণ্যেও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব সবজিতে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। বাজারে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। কচুর লতি ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়ার পিস ৪০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট পাতাকপির পিস ৫০ টাকা, ঝিঙা ৭০, চিচিঙ্গা ৭০, পটোল ৬০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ঢেঁড়স ছিল ৫০ টাকা, গতকাল তা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোলে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গত সপ্তাহেও যা ছিল ৫০ টাকা, এখন ৭০। বরবটির কেজি ৮০ টাকা, ধুন্দুলের কেজি ৬০ টাকা। শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। বাজারে শিমের কেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। বাজারে কাঁচামরিচের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। শুকনা মরিচের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
সবজির সাথে সাথে বেড়েছে শাকের দামও। পাট শাকের জোড়া আঁটি ২৫ টাকা, কলমি শাক জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কচুর শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, মুলার শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা, লালশাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, শাপলা ডাটার আঁটি ১৫ টাকা।
বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। প্যাকেট চিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। এসব বাজারে দেশী মসুরের ডালের কেজি ১৩০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া ভোজ্যতেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়।
খুচরা বাজারে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে অস্থিতিশীল ছিল ডিমের বাজার। সে সময় ডিমের ডজন ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগে দেশে কখনো ডিমের দামের এতটা বৃদ্ধি দেখা যায়নি।
মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।
চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি ও ইলিশ। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর গোশত ৭০০ টাকা আর খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকায়। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা কেজি এবং সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সোর্স : নয়া দিগন্ত