রাজশাহীর ৩৩টি হিমাগারের প্রায় ৬০ শতাংশ আলু এখনো বিক্রি হয়নি। এসব আলু গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তোলা। আগামী মাসে শুরু হবে পরবর্তী মৌসুমের আলু চাষ। এই আলুর কিছুটা নভেম্বরের শেষের দিকে বাজারে আসবে।
আগাম জাত হিসেবে পরিচিত এই আলু সাধারণত প্রতি কেজি ১০০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি করা হয়। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে উঠবে মৌসুমের আলু। বর্তমানে হিমাগারের আলু আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজিতে দু-তিন টাকা লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থায় চাষি ও মজুদদাররা বিপাকে পড়ছেন।
রাজশাহীর কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি করে প্রায় সাড়ে চার লাখ বস্তা আলু এখনো সংরক্ষিত আছে। সেই হিসাবে প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুদ রয়েছে। নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ কিছু নতুন আলু বাজারে আসতে শুরু করবে। এর আগে হিমাগারের আলু বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের মুখে পড়বেন জেলার প্রায় ১৫ হাজার চাষি ও ব্যবসায়ী (মজুদকারী)।
মৌসুমের শুরুতে যে দামে আলু কিনে হিমাগারজাত করা হয়েছে এখন সেই দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। ফলে প্রতি কেজিতে দু-তিন টাকা হারে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে নগরীর খুচরা বাজারে সেই আলু কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
তানোরের বিলে আলু চাষ করেন আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, গত বছর আলুবীজের দাম, জমি বর্গার টাকাসহ সব কিছুর দাম বেশি থাকায় আবাদে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। তারপর হিমাগারের খরচ যোগ করে প্রতি কেজিতে অন্তত ২০ টাকা ৫০ পয়সা খরচ পড়ে যায়। কিন্তু রাজশাহীর স্টোরগুলোতে এখন প্রতি কেজি লাল আলু বিক্রি করা হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। ফলে প্রতি কেজিতে অন্তত দু-তিন টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। তানোরের চাষি দিলদার হোসেন জানান, ৩০০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখে এখন বিক্রি করছেন প্রতি কেজিতে তিন টাকা লোকসান দিয়ে।
নগরীর সাহেববাজারের আলু ব্যবসায়ী মাজদার রহমান জানান, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২১-২২ টাকা দরে। তবে সেগুলো গড়পড়তায় বিক্রি হচ্ছে। কাউকে বেছে নিতে দেওয়া হয় না। আর সেই আলু খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ২৪ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে।
বাজারে আসা ক্রেতা নাজেরুল ইসলাম বলেন, ‘আলুর দাম নাকি স্টোরে কম। কিন্তু আমাদের তো কেজিতে চার থেকে আট টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। ’
দুর্গাপুরের আলু চাষি রহিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন হিমাগারে যে আলু আছে, সেগুলো গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদিত। এবার অক্টোবর মাসে আলু চাষ শুরু হবে। সেটি নভেম্বরের শেষ নাগাদ বাজারে আসবে। তবে সেই আলু প্রতি কেজি ১০০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি করা হয়। এ কারণে পুরনো আলুর চাহিদা থাকে। তবে এবার আলু পর্যাপ্ত থাকায় আগাম আলু তেমন চাষ করা হবে বলে মনে হয় না। ’
রাজশাহীর রহমান কোল্ড স্টোরেজের মালিক ও রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার পাঁচটি স্টোরে এবার প্রায় সাড়ে চার লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো মজুদ রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ বস্তা আলু। মজুদকারী চাষি ও ব্যবসায়ীরা এবারও আলু কিনে লোকসানের মুখে পড়েছেন। ’
টঙ্গিবাড়ীতে হিমাগারে লাখ টন আলু
গত মৌসুমে বৃষ্টির কারণে দুই দফায় আলুর বীজ বপন করায় কৃষকের উৎপাদন খরচ পড়েছে অনেক বেশি। তাই খরচ পুষিয়ে নিতে অনেক কৃষক হিমাগারগুলোতে আলু মজুদ করেন। কিন্তু আলুর দাম পাইকারি বাজারে বাড়েনি। এতে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ২৭টি হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নিয়ে এখন কৃষক বিপাকে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদন করতে কৃষকের ২০ টাকা খরচ হলেও চলতি সেপ্টেম্বর মাসে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১৬ টাকা কেজি দরে। এতে ১০০ কেজির বস্তায় লোকসান হচ্ছে ৪০০ টাকা। গত বছর এ সময় হিমাগার থেকে ৪৫ শতাংশ আলু খালাস করা হলেও এ বছর খালাস করা হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। হিমাগারগুলোতে এখনো প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুদ আছে।
টঙ্গিবাড়ীর শরীফ হিমাগারের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন জানান, কৃষক দাম না পাওয়ায় হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। যদি দাম না বাড়ে তবে তাঁদের আরো লোকসান গুনতে হবে।
টঙ্গিবাড়ী কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গেল মৌসুমে এ উপজেলায় ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। বেশি দামের আশায় কৃষক বেশির ভাগ আলু হিমাগারগুলোতে মজুদ করেছিলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়নুল আলম তালুকদার জানান, গত মৌসুমে আলুর উৎপাদন খরচ বেশি ছিল। আগের বছরের চেয়ে আলু উৎপাদনও কম হয়েছে। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
সোর্স : কালের কন্ঠ