সমান তালে চলছে করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ। দু’টি জীবাণুর সংক্রমণই সেপ্টেম্বর আসার পর থেকে বেড়ে চলেছে। ডেঙ্গুতে গত ২১ দিনে মারা গেছে ২৭ জন, আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজার ৬৯৪ জন। সেপ্টেম্বরের ২১ দিনে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজার ৯৮৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। তার মানে ডেঙ্গুতে গত ২১ দিনে গড়ে একজনের বেশি মৃত্যু হয়েছে এবং করোনায় গড়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। অপর দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। করোনা নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকরা আবারো আগের মতো মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন। করোনাবিষয়ক কারিগরি কমিটি বলেছে, অত্যাবশ্যক মিটিংগুলো ভার্চুয়ালি করতে পারলে ভালো। অত্যাবশ্যক না হলে মিটিংগুলো পরিহার করা উচিত। সবার উচিত অযাচিত জনসমাবেশ এড়িয়ে চলা। সমাবেশে যেতে চাইলে অবশ্যই মাস্ক পরে যাওয়া উচিত। কারণ পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাস্কই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। অতএব এখন সবারই উচিত বাইরে গেলে মাস্ক পরে যাওয়া।
অপর দিকে ডেঙ্গুতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪৩৭ জন; কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৭৮ জন। সামনের কয়েকদিন ডেঙ্গু এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুর চেয়ে নানা কারণে করোনা সংক্রমণ বেশি বাড়বে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
ডেঙ্গু ও করোনা দু’টি জীবাণুই ভাইরাস হলেও ডেঙ্গু ছড়ায় শুধু এডিস মশার কামড়ে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারলে এ ভাইরাসটিও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব খুব সহজেই। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা খুব সহজ নয়। এ জন্য মানুষকে সাবধান হতে হবে, নিজের অভ্যাস অথবা চলাফেরার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। প্রধানত ঢাকা মহানগরীই করোনা ও ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছে।
ঢাকায় যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ অথবা নিধন কার্যক্রম চলছে তাতে কাজ হচ্ছে না এটা বেশ স্পষ্ট। ঢাকার প্রতিটি অঞ্চলে মশক নিধনে ফগিং করা হচ্ছে। তবে তা সব জায়গায় নয়। এলাকাভেদে প্রতিদিনই মশক নিধনে ফগিং হয়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে, যেসব এলাকার লোকজন বেশি প্রভাবশালী সেখানে প্রতিদিনই ফগিং হচ্ছে; কিন্তু যেসব এলাকার মানুষ প্রভাবশালী নয়, যারা কথা বলতে পারেন না সেখানে মশক নিধনের তৎপরতাও তেমন জোরালো নয়। ফলে এখানে প্রতিদিনই শতাধিক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩০৬ জন এবং ঢাকা মহানগরীর ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এক হাজার ১৮৩ জন। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এক হাজার ৫২৯ জন।
গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনায় যে ৬৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আক্রান্ত হয়েছে ৫২৬ জন। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিএ.২ উপ-ধরনের স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন আসায়। নতুন স্পাইক প্রোটিনযুক্ত ওমিক্রন ভাইরাস মনে হচ্ছে একটু বেশি শক্তিশালী, যে কারণে সংক্রমণ সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর বাইরে গতকাল দেশের আট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২২ জন। বলা হয়েছে, ঢাকার বাইরে করোনা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। হয়তো এমন হতে পারে, যারা ঢাকার বাইরে করোনা আক্রান্ত হয়েছে এদের বেশির ভাগই ঢাকা থেকেই আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাইরে গিয়েছেন এবং সেখানে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ২ জন
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দু’জন মারা গেছেন। তাদের একজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যজন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে দু’জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। একই সময়ে ১২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তাদের চারজন চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অপর আটজন বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে চলতি বছর ৪০৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো।
সোর্স : নয়া দিগন্ত